ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

খুলনার ৮ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ 

আরিফুর রহমান, খুলনা

প্রকাশিত: ১৭:১৯, ২৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:১৯, ২৪ জুন ২০২৫

খুলনার ৮ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ 

ছবি: সংগৃহীত।

খুলনার সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও ৮ জন সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগে মামলার আবেদন করেছেন সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি। সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের খুলনার আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম একজন।   

সোমবার (২৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কো অর্ডিনেটর বরাবর অভিযোগ দায়ের করে মামলার জন্য আবেদন করেন ভুক্তভোগি। মঙ্গলবার (২৪ জুন) অভিযোগটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। 

অভিযুক্তরা হলেন, সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে শেখ জুয়েল, এস এম কামাল, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সালাম মোর্শেদী, বাবু নারায়ণচন্দ্র চন্দ, শেখ হেলাল, আক্তারুজ্জামান বাবু, রাশীদুজ্জামান মোড়ল এবং শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সেখ সোহেল, খুলনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাড সাইফুল ইসলাম, সভাপতি, শফিকুর রহমান পলাশ, খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ, খুলনা মহানগর যুবলীগ সভাপতি শেখ শাহাজালাল সুজন, খুলনার সাবেক পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক, আর সি ফুডের মালিক ইকবাল বাহার চৌধুরী, উপপুলিশ কমিশনার সোনালী সেন, পুলিশের এডিসি গোপিনাথ কানজিলাল,ডিবির নুরুজ্জামান, লবনচরা থানার সাবেক ওসি মনির, খুলনা সদর থানার এস আই হাসান, সোনাডাঙ্গা থানার এসআই সুমন মন্ডল, সোনাডাঙ্গা থানার সাবেক ওসি মমতাজ, ছাত্রলীগ নেতা সাইফ, খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের এডিডি জহিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ও আওয়ামীলীগ নেতা জগলুল কাদের। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছেন সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি। ৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ সমন্বয়ক হিসাবে দায়িত্ব পান তিনি। ঘটনার দিন মেজবাহ উদ্দিন (স্বাক্ষী) ও সাজিদুল ইসলাম বাপ্পির কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিতে রওনা হয়। খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় থেকে পূর্বঘোষিত সড়ক ও রেল অবরোধ কর্মসূচীতে অংশ নিতে নতুন রাস্তা মোড়ের উদ্দেশ্যে ইজি বাইকে করে যাত্রা করলে সোনাডাঙ্গা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে পৌঁছানো মাত্রই অজ্ঞাত মুখোশধারী আওয়ামী নেতা ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে ১৫ থেকে ২০ জন ইজিবাইকের গতিরোধ করে টেনেহেচড়ে ইজিবাইক থেকে মেজবাহ উদ্দিন (স্বাক্ষী) ও সাজিদুল ইসলাম বাপ্পিকে নামিয়ে নেয়। মেজবাহ উদ্দিন (স্বাক্ষী) এবং ইজিবাইক চালক ইদ্রিস সহ কয়েকজন আমাকে সহযোগীতা করতে এগিয়ে আসলে আসামীরা দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সাজিদুল ইসলাম বাপ্পির হাত ও চোখ বেঁধে ফেলে। সে যেনো চিৎকার করতে না পারি এজন্য এসময় তার মুখের মধ্যে কাপড় দিয়ে রাখে। দীর্ঘ ১২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে সাজিদুল ইসলাম বাপ্পির চোখ এবং হাত বেঁধে রাখা হয়। সাজিদুল ইসলাম বাপ্পিকে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে সাজিদুল ইসলাম বাপ্পিকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে ও মাথায় আঘাত করে তারপর তাকে একটা বন্ধ ঘরে আটকে রাখে। তাকে আন্দোলন বন্ধ করতে চাপ দেয়। তখন সে আমি রাজি না হলে আবার নির্যাতন করে। তাকে হাত পা বাধা অবস্থায় পানি খেতে চাইলেও গালাগালি করে।  সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাকে কিছুই খেতে দেইনি। সাজিদুল ইসলাম বাপ্পিকে তারা মারাত্মক ভাবে যখম করে। তার কাছে টাকা নগদ টাকা সোনার আংটি তারা জোর করে নিয়ে যায়।  তারা বাপ্পিকে আনুমানিক ১০ তাই আবার গাড়ীতে করে নিয়ে আড়ংঘাটা বাইপাস মোড় থেকে একটু সামনে একটা ফাকা বাগানের ভিতর হাত পা বান্ধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। সেখান থেকে এলাকাবাসি বাপ্পিকে উদ্ধার করে। 

সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, পতন হওয়া আওয়ামীলীগ সরকারের উচ্চ মহল থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এবং সরকারী দল আওয়ামীলীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীদেরকে সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র—জনতার উপর লেলিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে সারাদেশে ১৫০০ লোক নিহত এবং ২৫০০০ ছাত্র এবং  সাধারন জনতা আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। আমি ন্যায় বিচার পাওয়া আশায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আশা করছি ন্যায় বিচার পাবো। 

সায়মা ইসলাম

×