
ছবি: সংগৃহীত
আজকের দ্রুতগতির জীবনযাত্রা, বাড়তে থাকা মানসিক চাপ এবং বয়সজনিত পরিবর্তনের কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোসংযোগে সমস্যা ও মানসিক ক্লান্তি অনেকেরই নিত্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কিছু বিশেষ পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, স্নায়ুর সুস্থতা ও বয়সজনিত মানসিক অবনতি প্রতিরোধ সম্ভব। নিচে এমন ৮টি বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত উপাদান তুলে ধরা হলো, যেগুলো স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১. ম্যাগনেশিয়াম
মস্তিষ্কের স্নায়ু সংকেত পরিচালনা এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণে ম্যাগনেশিয়ামের ভূমিকা অপরিসীম। এটি নিউরোট্রান্সমিটার সক্রিয় করে, যা মস্তিষ্ককোষের মাঝে বার্তা আদান-প্রদান নিশ্চিত করে। ঘাটতি হলে মনোযোগের সমস্যা, উদ্বেগ এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: শাকসবজি, বাদাম, বীজ এবং পুরো শস্যজাতীয় খাবার।
২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
বিশেষ করে DHA মস্তিষ্কের গঠন ও সঠিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। এটি কোষের ঝিল্লি গঠনে সাহায্য করে এবং স্নায়ুকোষের মাঝে যোগাযোগ শক্তিশালী করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ওমেগা-৩ গ্রহণ স্মৃতিশক্তি, শেখার দক্ষতা এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত করে।
ওমেগা-৩ উৎস: স্যামন মাছ, চিয়া বীজ, আখরোট।
৩. ক্যাটেচিন
সবুজ চায়ে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যাটেচিন ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে, স্নায়ুকোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে এবং রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। নিয়মিত সবুজ চা পান স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. মাইরিসেটিন
বেরি, পেঁয়াজ ও চায়ে পাওয়া যায় এমন এই উদ্ভিজ্জ যৌগটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এটি মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করে এবং আলঝেইমারের মতো রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
৫. ভিটামিন ই
এই ফ্যাট-সলিউবল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্ক কোষের ঝিল্লি রক্ষা করে এবং বার্ধক্যজনিত ক্ষয় কমায়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ভিটামিন ই গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে মানসিক অবনতি অনেক কম।
উৎস: বাদাম, বীজ, পালং শাক, অ্যাভোকাডো।
৬. ভিটামিন ডি
‘সানশাইন ভিটামিন’ নামে পরিচিত এই পুষ্টি উপাদান স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং স্নায়ুকোষের মধ্যে যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘাটতি হলে মানসিক অবসাদ, স্মৃতিভ্রান্তি এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
উৎস: রোদ, চর্বিযুক্ত মাছ, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার ও সাপ্লিমেন্ট।
৭. ভিটামিন বি১২
স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা রক্ষায় এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ঘাটতি হলে অবসাদ, স্মৃতিভ্রান্তি ও স্নায়ুজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উৎস: মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার। নিরামিষভোজীদের জন্য সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।
৮. কোয়ারসেটিন
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাবযুক্ত এই ফ্ল্যাভোনয়েড স্নায়ুকোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং শেখার ক্ষমতা ও মানসিক পরিষ্কারভাব বাড়াতে সহায়তা করে।
উৎস: আপেল, বেরি, আঙ্গুর, লাল পেঁয়াজ।
আমাদের মস্তিষ্ক একটি জটিল এবং শক্তিশালী অঙ্গ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির মাধ্যমে এটিকে সুস্থ রাখা সম্ভব। স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য রক্ষায় উপরোক্ত ৮টি পুষ্টি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এগুলো অন্তর্ভুক্ত করে আজ থেকেই শুরু হোক ‘মস্তিষ্কবান্ধব জীবনযাপন’।
আবির