
আজকাল অনেকেই বিড়াল পালতে পছন্দ করেন, কিন্তু বুঝেন না এই বোবা প্রাণী কখন কি চায়। আবার অনেক অদ্ভুত জিনিস আছে যা শুধু বিড়ালপ্রেমীরাই বুঝবেন। উদাহরণস্বরূপ, এক নিথর ইঁদুর উপহার পাওয়া বা আপনার গ্লাসটা টেবিল থেকে ফেলে দেওয়া ইত্যাদি।
নিচে কিছু অপ্রচলিত আচরণ তুলে ধরা হলো যা হয়তো বোঝায় আপনার বিড়াল আসলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে।
যেভাবে বিড়ালরা মনোযোগ চায়
আপনি যখন বই পড়ছেন বা ল্যাপটপে কাজ করছেন, ঠিক তখনই বিড়াল এসে আপনার উপর শুয়ে পড়ে — এটা তার মনোযোগ চাওয়ার উপায়।
এই আচরণ মানে আপনি যেন কাজ বাদ দিয়ে তাকে আদর করেন।
কেন বিড়ালরা আপনার ডাকে সাড়া দেয় না
বিড়ালরা খুবই বুদ্ধিমান, কিন্তু একই সঙ্গে বেশ একরোখা। তারা আপনার ডাকে না আসার মানে এই নয় যে তারা নাম চেনে না, বরং তারা ইচ্ছা করেই আসে না।
তারা যখন ইচ্ছা করে, তখনই আপনার কাছে আসে।
কিভাবে বিড়ালরা স্বস্তি পায়
ছোট অবস্থায় বিড়ালছানারা দুধ খাওয়ার সময় মায়ের পেটে থাবা দেয়, এটা দুধ বের করতে সাহায্য করে।
এই অভ্যাস বড় হয়েও অনেক বিড়ালের মধ্যে থেকে যায়। তারা মানুষের শরীরের নরম অংশে থাবা দেয়, যা তাদের শান্তি দেয় এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
কেন বিড়ালরা আপনাকে শুকে
বিড়ালরা স্বভাবগতভাবে কৌতূহলী।
যখন তারা আপনাকে হঠাৎ এসে শুকে, তখন তারা আসলে আপনার পরিচিত গন্ধ পেতে চায়। এটা তাদের নিশ্চিন্ত করে এবং আপনাকে চিনে শান্ত বোধ করে।
কেন বিড়াল প্লাস্টিক কামড়ায়
আপনার বিড়াল যদি হঠাৎ প্লাস্টিক বা অন্য অখাদ্য জিনিস কামড়াতে শুরু করে, তবে এটি "পিকা" নামে পরিচিত এক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
এটি স্ট্রেস বা পুষ্টিহীনতা থেকে হতে পারে। এই আচরণ নিয়মিত হলে, ভেটেরিনারিয়ান দেখানো জরুরি।
বিড়ালের হতাশার প্রকাশ
বিড়াল যখন জানালার বাইরে পাখি দেখে এবং এক ধরনের দ্রুত চঞ্চল শব্দ করে, এটি তার হতাশার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
সে পাখিটাকে ধরতে চায়, কিন্তু জানালার কারণে পারছে না। অন্য ব্যাখ্যা মতে, এটি শিকার করার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মুখের মাংসপেশি গরম করার চেষ্টা।
যেভাবে বিড়াল আপনার প্রতি খোলামেলা হয়
মানুষের কাছে পেছন ফিরিয়ে রাখা অপমানজনক হতে পারে, কিন্তু বিড়াল যদি লেজ তুলে পেছন দেখায়, তাহলে সেটা হলো তার বিশ্বাস প্রকাশের লক্ষণ।
সে বোঝাতে চায় আপনি তার কাছে নিরাপদ, এবং সে আপনাকে বিশ্বাস করে।
যেভাবে বিড়াল খেলতে চায়
বিড়াল যখন পিঠে শুয়ে গড়াগড়ি করে, সেটা হয়তো আরাম নেওয়া, স্ট্রেচিং কিংবা খেলতে চাওয়ার সংকেত।
তবে এটি হতে পারে সে নিজের গন্ধ ছেড়ে জায়গাটি নিজের এলাকা হিসেবে দাবি করছে।
কেন বিড়াল রাতে কাঁদে
রাতে যখন আপনি ঘুমাচ্ছেন, তখন বিড়াল ঘরের ভেতর হাঁটাচলা করে। রাতের সময় তারা বেশি সক্রিয় থাকে।
যদি সে কোন শিকার (ইঁদুর, পোকা) না পায়, তাহলে হতাশ হয়ে কেঁদে উঠে। এটা বন্ধ করতে চাইলে তাকে দিনে বেশি খেলতে দিন, যাতে সে ক্লান্ত হয়ে রাতে ঘুমায়।
কেন বিড়াল লুকোচুরি খেলে
আপনি নিশ্চয়ই কখনো দেখেছেন আপনার বিড়াল কোনো ছোট ঘরে বা বাক্সে লুকিয়ে আছে। এটা তাদের নিরাপদ বোধ করায়।
বন্য অবস্থায় বিড়ালরা হুমকি এড়াতে গুহা বা ছোট জায়গায় আশ্রয় নেয়। ঘরের বড় বড় আরামদায়ক জায়গা বাদ দিয়ে ছোট জায়গায় লুকানো আসলে তাদের নিরাপত্তার অনুভূতির অংশ।
বিড়ালের পেটের নিচে ঝুলে থাকা চামড়ার ব্যপারটা কী?
আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন যে আপনার বিড়ালের পেটের নিচে একটু ঝুলে পড়া চামড়ার অংশ আছে? অনেকেই ভাবেন এটা অতিরিক্ত মেদ, কিন্তু আসলে এটি হলো প্রাইমোরডিয়াল পাউচ (Primordial Pouch) — এবং এর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে।
কেন বিড়ালরা একাকীত্ব খোঁজে
যখন কোনো বিড়াল — বিশেষ করে বয়স্ক — হঠাৎ করে নিজেকে আলাদা করে ফেলে বা একা একা থাকতে চায়, তখন সেটি অনেক সময় তার প্রাকৃতিক মৃত্যু-প্রস্তুতির অংশ হতে পারে।
এই বিষয়টি কষ্টদায়ক হলেও এটি তাদের আত্মরক্ষামূলক স্বভাবের একটি দিক।
বিড়ালরা তখন নিজেকে সোফার নিচে, আলমারির ভেতর বা ঘরের কোন এক অজানা জায়গায় লুকিয়ে রাখে, যেন দুর্বল অবস্থায় শিকারির হাত থেকে বাঁচতে পারে।
আপনার বিড়াল যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি একাকীত্ব খুঁজে নেয়, তবে এটি তার জীবনের শেষ সময়ের ইঙ্গিত হতে পারে। এ সময় তার পাশে থেকে ভালোবাসা ও আরাম দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিড়ালরা কি মানুষের মৃত্যু আগেভাগেই টের পায়?
যদিও বিড়ালদের মৃত্যু টের পাওয়ার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, তবুও কিছু রহস্যজনক ঘটনা রয়েছে।
যেমন, ২০০৭ সালে আলোচনায় এসেছিল অস্কার নামের একটি থেরাপি বিড়াল, যে হাসপাতালে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের পাশে গিয়ে শুয়ে থাকত— কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা মারা যেতেন।
এটি কি সত্যিই মৃত্যু টের পাওয়া, নাকি নিঃশব্দ ও উষ্ণ জায়গা খোঁজার প্রবৃত্তি?
বিড়ালদের ঘ্রাণশক্তি অত্যন্ত প্রখর এবং তারা পরিবেশের ক্ষুদ্র পরিবর্তন খুব ভালোভাবে ধরতে পারে, যা হয়তো এমন আচরণের পেছনে কারণ।
তবে বিড়ালের একটি বিষয় নিশ্চিত: তারা দারুণভাবে সঙ্গ দেয় এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়।
আপনি যখন মানসিক চাপে থাকেন বা অসুস্থ হন, তখন আপনার বিড়াল হয়তো বারবার আপনার কাছে আসে, এমনকি আপনাকে চাটতেও পারে — এটি তাদের ভালোবাসা ও সহানুভূতির প্রকাশ।
সানজানা