ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

উত্তরাঞ্চলে অতিভারি বৃষ্টিতে খাল-বিল, নদ-নদীতে পানি বাড়ছে

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২৪ জুন ২০২৫

উত্তরাঞ্চলে অতিভারি বৃষ্টিতে খাল-বিল, নদ-নদীতে পানি বাড়ছে

ভাবি বর্ষণে জেলা সদরের কুন্দপুকুর এলাকার ফসলী জমি তলিয়ে গেছে

দেশের উত্তরাঞ্চলে অতিভারি বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার অতিভারি বৃষ্টির কবলে পড়ে পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর ও বিভাগীয় শহর রংপুর এবং তিস্তা অববাহিকা এলাকাসমূহ। এতে করে এ অঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নদীবেষ্টিত এলাকায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতের দো-মহনী থেকে মেখলিগঞ্জ তিস্তা অববাহিকায় হলুদ সংকেত এবং বাংলাদেশের তিস্তার ডালিয়া থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত কমলা সংকেত জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া টানা বৃষ্টিপাত থাকার কারণে উত্তরাঞ্চলের খাল- বিল উপচে পড়ছে বৃষ্টির পানিতে। 
মঙ্গলবার তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার (৫২.১৫) দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচগেট খুলে রাখা হয়েছে। অপরদিকে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সমতালে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ সেন্টিমিটার। তবে এসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রমতে দিনে ১১ থেকে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে বলা হয় মাঝারি, আর ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে বলা হয় মাঝারি থেকে ভারি। আবার ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে বলা হয়  ভারি। সর্বশেষ ৮৮ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি হলে বলা হয় অতিভারি। 
এদিকে  বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকাস্থ বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকার আশপাশের জেলাসমূহে অতিভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বৃষ্টি পরিমাপে নীলফামারী শহরে ১৪৫ মিলিমিটার, নীলফামারীর তিস্তা অববাহিকার ডালিয়া পয়েন্টে ১২৮ মিলিমিটার ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে ১০৮ মিলিমিটার, পঞ্চগড় শহরে ১২৩ মিলিমিটার, রংপুরের বদরগঞ্জে ১১৭ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ১১৪ মিলিমিটার, ঠাকুরগাঁও শহরে ৬৬ মিলিমিটার, কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরে ৫৪ মিলিমিটার   বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এছাড়া তিস্তা সংযুক্ত ভারতের কোচবিহারে ১১৪ ও শিলিগুড়িতে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, অতিভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি মঙ্গলবার সকাল থেকে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত সোমবার এই পয়েন্টে একই সময় পানি প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। এতে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২.১৫ সেন্টিমিটার। অপরদিকে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টেও ১৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। তিনি আরও বলেন, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীতে পানি আগামী ২ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তা নদী সতর্কসীমায় (বিপৎসীমার কাছাকাছি) প্রবাহিত হতে পারে।

এজন্য নদীর লেবেল অনুযায়ী তিস্তার ভারতীয় অংশে হলুদ ও বাংলাদেশ অংশে কমলা সংকেত জারি রয়েছে।  অপরদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় অতিভারি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে তিস্তা অববাহিকার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় ১৩৪ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ১১২ মিলিমিটার, বিভাগীয় শহর রংপুরে ৯৬ মিলিমিটার, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৬৮ মিলিমিটার, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৫৫ মিলিমিটার ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৫৬ মিলিমিটার। ভারি বৃষ্টির কারণে ডোবা- নালা, খাল-বিলে পানি  উপচে পড়ছে। এ বৃষ্টিতে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টি জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও একই সঙ্গে ভোগান্তিতে ফেলেছে চাকরিজীবী ও শ্রমজীবীদের।

×