ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

শ্রীবরদীর রানীশিমুল ইউনিয়নে কাঁচা রাস্তায় জনদুর্ভোগ

মো: সাফিজল হক তানভীর, কনট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৪ জুন ২০২৫

শ্রীবরদীর রানীশিমুল ইউনিয়নে কাঁচা রাস্তায় জনদুর্ভোগ

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ২নং রানীশিমুল ইউনিয়নের কাঁচা রাস্তাগুলোর বেহাল দশা যেন কোনো দায়িত্বশীলের চোখে পড়ে না। বিশেষ করে ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের প্রধান সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই পথে চলাচল করেন। তবে ভাঙাচোরা, কর্দমাক্ত আর কাদা-পানিতে ভর্তি এই রাস্তাটি যেন তাদের নিত্যদিনের যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতি নির্বাচনের পর চেয়ারম্যানরা নিজেদের বাড়ির রাস্তা পাকা করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ যাদের ভোটে তারা নির্বাচিত হন, সেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে যেন কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যকর পদক্ষেপ এবং প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে বছরের পর বছর ধরে এসব সমস্যা থেকে যাচ্ছে অমীমাংসিত।

১নং ওয়ার্ডের দড়িপাড়া গ্রামের চিত্র আরও করুণ। বৃষ্টি হলেই রাস্তা হাঁটু সমান কাদায় পরিণত হয়। এতে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী, নারী, বৃদ্ধসহ সব শ্রেণির মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অথচ এই এলাকার ভোটাররা নির্বাচনের সময় সবসময়ই প্রার্থীদের বড় ভরসা হয়ে থাকেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, “আমাদের গ্রামে এখনও অনেক মৌলিক সমস্যার সমাধান হয়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। বৃষ্টির সময় চলাফেরা একেবারে দুরূহ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারে না, রোগী নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতেও সমস্যা হয়। কৃষিপণ্য বাজারে নিতে গিয়ে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। আমি স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

৪নং ওয়ার্ডের চেংগুত্তার গ্রামের অবস্থা খুব ভয়াবহ। গোটা গ্রামে কোনো উন্নত সড়ক নেই। বর্ষাকালে এখানকার কাঁদামাটির পথ একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে কৃষিপণ্য পরিবহন, শিশুদের স্কুলে যাওয়া কিংবা রোগী বহনের মতো জরুরি কাজগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

চেংগুত্তার গ্রামের হাকিম মিয়া বলেন, “আমাদের গ্রামের একমাত্র রাস্তাটি বহুদিন ধরে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বর্ষায় কাঁদা-পানিতে চলাচল একেবারে অসম্ভব হয়ে যায়। কৃষিপণ্য ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয় যখন কেউ অসুস্থ হয়—তখন রিকশাও ঢুকতে পারে না, অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা। বারবার বললেও কেউ শোনে না আমাদের আর্তনাদ।”

স্থানীয় বাসিন্দা নাইম বলেন, “যারা ভবিষ্যতে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তারা যেন জনগণের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে নয়, কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন করেন। তবেই জনগণও তাদের পাশে থাকবে।”

রানীশিমুল ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা আলমগীর হাসান জানান, “বছরের প্রায় ৪-৫ মাস এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। এ সময় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, দ্রুত এই রাস্তাগুলোর সংস্কার করে এলাকাবাসীর কষ্ট লাঘব করা হোক।”

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাবের আহম্মেদ বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী উন্নয়ন বাজেটে এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সজিব

×