
ছবি: সংগৃহীত
আপনি কি ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন? সেটা স্বাস্থ্যের কারণে হোক বা চিকিৎসার কারণে—ওজন কমানো সহজ কোনো কাজ নয়। অনলাইনে পাওয়া যায় নানা পরামর্শ, কোনটা করবেন, কোনটা নয়। তবে ওজন কমাতে সবচেয়ে জরুরি হলো ক্যালোরি ঘাটতি (ক্যালরি ডেফিসিট) ও নিয়মিত ব্যায়াম।
তবে এর বাইরেও এমন কিছু অভ্যাস আছে, যেগুলো হয়তো আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। জনপ্রিয় ফিটনেস কোচ লেসি, যিনি ইনস্টাগ্রামে ৪.৫ মিলিয়নের বেশি অনুসারী নিয়ে কাজ করছেন, ২৮ দিনের ওজন কমানোর চ্যালেঞ্জে অনুসরণ করেন ৭টি নিয়ম। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে পাওয়া যায় চোখে পড়ার মতো ফলাফল।
চলুন জেনে নিই সেই ৭টি নিয়ম—
১. সোডা সম্পূর্ণভাবে বাদ দিন
এই চ্যালেঞ্জের প্রথম ও প্রধান নিয়ম হলো—সোডা একেবারে বন্ধ করা। যেকোনো মিষ্টি পানীয়, বিশেষ করে সোডা, ওজন বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ। এমনকি ডায়েট সোডাও, যেগুলোকে ক্যালোরি-ফ্রি বলা হয়, সেগুলোও অতিরিক্ত ক্ষুধা ও পেট ফাঁপার সমস্যা তৈরি করে। সোডার বদলে পানি বা হারবাল চা পান করুন।
২. চিনি বাদ দিন
আপনি যদি ক্যালোরি কমিয়ে খান অথচ দিনে পরদিন পরিশোধিত চিনি খান, তাহলে তাতে বিশেষ লাভ নেই। চিনি রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি ঘটায় এবং পরে হঠাৎ নেমে যাওয়ায় তৈরি হয় ক্লান্তি ও অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা। চিনিমুক্ত খাবার খেলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়, হজম শক্তি বাড়ে এবং চর্বি কমে। মিষ্টির পরিবর্তে ফল খান—তবে মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
৩. কফি ছাড়ুন
ওজন কমানোর পথে অনেকেই ক্ষুধা দমন করতে অতিরিক্ত কফি খেয়ে ফেলেন। যদিও সীমিত কফি ক্ষতিকর নয়, কিন্তু অতিরিক্ত ক্যাফেইন ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, উদ্বেগ বাড়ায় এবং কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে চর্বি জমতে সাহায্য করে। ২৮ দিনের জন্য কফি পুরোপুরি বন্ধ করে দিন যাতে শরীরের অ্যাড্রিনাল সিস্টেম নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
৪. রাত ১০টার মধ্যে ঘুমাতে যান
ওজন কমাতে ঘুম অপরিহার্য। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমাতে গেলে শরীরের প্রাকৃতিক ঘুম-চক্র বা সার্কাডিয়ান রিদম এর সঙ্গে তাল মেলে। ভালো ঘুম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে পেটের চারপাশে চর্বি জমা বাড়ে।
৫. প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট ব্যায়াম করুন
লেসি পরামর্শ দেন প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট শরীরচর্চা করার। আপনার স্বাস্থ্য ও ফিটনেস লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরন ঠিক করুন। দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে কার্ডিও ও স্ট্রেংথ ট্রেনিং দুটোই করুন। হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT) কার্যকর হতে পারে। ধীরে ধীরে শুরু করতে চাইলে brisk walking বা দৌড়ও ভালো। তবে নিয়মিততাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
৬. প্রতিদিন ১০ মিনিট মেডিটেশন করুন
শুধু খাবার ও শরীরচর্চাই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট ধ্যান বা মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ কমে, আবেগপ্রবণ খাওয়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মনোযোগ বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাস আপনার ফিটনেস লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।
৭. প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করুন
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা ওজন কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি হজমে সাহায্য করে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে এবং ক্ষুধা কমায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন। সাথেই রাখুন একটি রিইউজেবল পানি বোতল—তাতে মনে থাকবে পানি খাওয়ার কথা।
এই ৭টি নিয়ম যদি আপনি মাত্র ২৮ দিন মেনে চলেন, তাহলে ওজন কমার পাশাপাশি মিলবে আরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। তবে যেকোনো নতুন রুটিন শুরু করার আগে আপনার শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
আবির