
ছবি: সংগৃহীত
"তিনি আমাদের মতো মানুষ কিনা তা নিশ্চিত করতে আমাকে মেসিকে স্পর্শ করতে হয়েছিল।"- জিজি বুফন।
২৪ শে জুন ১৯৮৭, রোজারিও, আর্জেন্টিনা, যেখানে রূপকথা নেমে এসেছিল মাটির পৃথিবীতে।
হাজারো চড়াই উতরাই পেরিয়ে রূপকথার সেই ছোট্টটি কারো কাছে হলো মেসি, কারো কাছে লিও, কারো কাছে গ্রেটেস্ট অব অল টাইম, আর কারো জন্য একটা স্বপ্ন, একটু সাহস।ফুটবল দুনিয়া যাকে ভালোবাসতে-বাসতে হয়ে গেছি এক। একসাথে ভেঙেছি, হেরেছি, হারিয়েছি শ্রেষ্ঠ স্বপ্ন, একসাথে দাঁড়িয়েছি, হেসেছি আবার।
ছোট্ট জীবনে প্রাপ্তির ভাগটাই বেশি তার। বাম পায়ের জাদু কোথা হতে কোথায় না নিয়ে গেছে সেই লিওকে। ১৩ বছর বয়সে ন্যাপকিনের ওপর গোটা গোটা অক্ষরে নিজের নাম তুলে ফুটবলের পাওয়ার হাউজ বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলো মেসি। সেই শুরু, আর পিছনে তাকাতে হয়নি। দুহাত ভরে নিজের সবটা দিয়েছে প্রিয় ক্লাবকে। আবার বিদায় বেলায় সেই ন্যাপকিনেই লুকিয়েছে নিজের ভেজা দু-চোখ। একটা ক্লাবের সাথে যার বিচ্ছেদ কাঁদিয়েছে লক্ষ কোটি ভক্তকে, সেই ছোট্ট মেসি এবার চলে এসেছে আর্জেন্টিনাকে বিদায় বলার দ্বারপ্রান্তে! জীবন যেন এমনই। জলে ভাসা পদ্ম জীবন!
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৫, মেসিকে স্পেনের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। লা লিগার দাঁড় খুলে যায় তার জন্য।
আর্জেন্টাইন-স্পেনীয় নাগরিক হিসেবে মেসিকে স্পেনের জাতীয় অনূর্ধ্ব ২০ দলে খেলার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়। অনূর্ধ্ব ২০ দলের হয়ে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে সে মাঠে নামে ঠিকই তবে স্পেনের জার্সিতে নয়, আকাশি নীলে প্রিয় আর্জেন্টাইন জার্সিতে।
রোনালদিনিয়োর প্রস্থানে বার্সার ১০ নম্বর জার্সি গায়ে জড়ায় মেসি। ২০১০ বিশ্বকাপে প্রথমবার আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সি পরে সে। জার্সির সাথে একের পর এক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় সে।
মেসিই হয়ে যায় আর্জেন্টিনার পোস্টার বয়, দলের ত্রাণকর্তা। সেই মেসি যার হৃদয় জুড়ে একটা দল, একটা প্রচেষ্টা, শেষ হাসি হাসবার। একটা ক্ষুধা কোটি আর্জেন্টাইন ভক্তের বুকে আরেকটা তারা এঁকে দেবার। কি নেই জাদুকরের ঝুলিতে। জাদুর কাঠি ঘুরাতেই যেন একের পর এক অর্জন যোগ হয়েছে তার নামের পাশে। যার পায়ের জাদু মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে তার বিপক্ষ সমর্থকদেরও।
তবুও বলা হয়েছিল আছে অপূর্ণতা, আছে না পাওয়ার হাহাকার। আচ্ছা একটা বিশ্বকাপের অভাব কি মলিন করতে পারে মেসি নামক ম্যাজিসিয়ানের ক্যারিয়ার! আরো একটিবার আসে সেই স্বপ্নের মঞ্চ। বাতাসে যেন ধ্বনিত হচ্ছে 'আর একটিবার প্রিয়, আর একটিবার'। পেনাল্টি নামক সেই রঙ্গমঞ্চে দাঁড়িয়ে কেবল দর্শক হিসেবেই কি পায়ের পেশিতে কাঁপন উঠেনি আপনার? মাথার মধ্যে বিরাজ করেনি এক মহাকাশ শূন্যতা? তাহলে বলাই বাহুল্য দর্শক হিসেবে বেশ শক্ত নার্ভের আপনি!
তবে ইতিহাসকে আর রুখে দেওয়া যায়নি সে যাত্রায়। সে নিজের গতিপথ খুঁজেই নিলো, লক্ষ্যভেদ করলো প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট মুখে। ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে হারিয়ে সেই বহুল আরাধ্য কাপটিকে নিজের করে নেন মেসি। এই আর্জেন্টিনা যেন হয়ে ওঠে এক অপ্রতিরোধ্য ত্রাস। আচ্ছা যখন মেসির হাতে উঠে সেই কাঙ্ক্ষিত সোনালি কাপ, সৌভাগ্যবান হয় কে? মেসি নাকি ঐ কাপ! নাকি আমরা যারা সাক্ষী হয়েছি ইতিহাসের!
বলা হয়েছিল মেসি কেবল বার্সেলোনার। দেশের জার্সিতে বারবার হোঁচট খাওয়া সেই ছেলেটার এখন আন্তর্জাতিক শিরোপা চারটি। বিশ্বকাপের সঙ্গে রয়েছে দুটি কোপা আমেরিকা কাপ। এছাড়াও ব্যক্তিগত ঝুলিতে রয়েছে ৬টা গোল্ডেন বুট ও ৮টা ব্যালন ডি-অর। মেসি আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেইসাথে ফুটবল ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন একজন জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে।
আজ ২৪ শে জুন এই ফুটবল জাদুকরের জন্মদিন। ক্যারিয়ারের বাকি দিনগুলিতেও মেসি ফুটবলকে দিয়ে যাক দু হাত ভরে এই প্রত্যাশা।
Mily