
মঙ্গলবার কলম্বোয় অনুশীলনে হাস্যোজ্জ্বল লিটন কুমার দাস (বাঁয়ে), সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বাংলাদেশের কোচ ফিল সিমন্স
পঞ্চম দিনের শুরুতে আরেকটু সাহসী ব্যাটিং করলে, কিংবা বৃষ্টিতে ঘণ্টা দুয়েক নষ্ট না হলে জয়ের ভালো সম্ভাবনা তৈরি হতে পারত; এর পরও গলে শেষ মুহূর্তে ড্র হওয়া প্রথম টেস্টে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাস গড়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (১৪৮ ও অপরাজিত ১২৫)। ব্যাড প্যাঁচ কাটিয়ে সেঞ্চুরি পেয়েছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও (১৬৩)। ৯০ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেছেন লিটন দাস। জ্বর থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
সর্বোপরি আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে কলম্বোতে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামছে টাইগাররা। মঙ্গলবার ম্যাচ পুর্ব সংবাদ সম্মেলনে কোচ ফিল সিমন্স বলেছেন, ‘গলের পারফর্ম্যান্স অবশ্যয়ী প্রেরণাদায়ী, তবে কলম্বোর কন্ডিশনে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে সেরাটা দিতে হবে। কারণ নিজেদের মাটিতে শ্রীলঙ্কা সবসময়েই ভয়ঙ্কর।’ আগেরদিনই অধিনায়ক শান্ত জানিয়েছিলেন, জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেন না তারা। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে খেলা শুরু সকাল সাড়ে দশটায়।
সাধারণত দলের বোলাররা ম্যাচ জয়ের সুযোগ তৈরি করে দিলেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ম্যাচ হারতে হয় বাংলাদেশকে। তবে গল টেস্টে ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়েছে টাইগার ব্যাটাররা। জয়ের সুযোগ থাকলেও, পরিকল্পনার অভাবে শেষ পর্যন্ত সাফল্য পায়নি সফরকারিরা। কারন আগেভাগে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেনি টাইগাররা। তাই শান্ত ও মুশফিক ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফম্যান্স করলেও অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত মাইলফলকের সমালোচনা করেছেন। সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে অধিনায়ক শান্ত তখন বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত করতে পারি, আমাদের ড্রেসিংরুমে কেউ ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্য খেলবে না।’ গল থেকে একেবারেই ভিন্ন দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু।
কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত বেশিরভাগ ম্যাচই নিষ্পত্তি হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ৪৫টি টেস্টের মধ্যে ৩১টির ফলাফল হয়েছে। এ মাঠে সর্বশেষ ড্র হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেটিও আবার বৃষ্টির কারণে। ২০১০ সাল থেকে গত ১৪ বছরে এই ভেন্যুতে কোনো টেস্ট ড্র হয়নি। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে তিনটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সবগুলোই বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। সর্বশেষ ১৮ বছর আগে এই মাঠে খেলেছিল টাইগাররা। তবে এই মাঠে বাংলাদেশের সুখস্মৃতি আছে।
২০০১ সালে এ মাঠে টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। যা এখনও অ্যাশের দখলেই আছে। জ্বরের কারণে প্রথম টেস্ট মিস করা টেস্টে বিশ্বের দ্বিতীয়সেরা অলরাউন্ডার মিরাজ পুরোপুরি ফিট। তার প্রত্যাবর্তন আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বাংলাদেশের।
এই টেস্টের উইকেট থেকে পাবে স্পিনাররা। এই উইকেটে স্পিনাররা ৫১.৯২ শতাংশ এবং পেসাররা ৪৮.০৮ শতাংশ উইকেট শিকার করেছে। এই ভেন্যুতে ১৬৬ উইকেট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের সহজেই খেলেছিল বাংলাদেশ। যা টাইগার ব্যাটারদের বাড়তি সাহস দেবে। কিন্তু গেল বছর এই ভেন্যুতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্পিনার প্রবাথ জয়সুরিয়ার ৮ উইকেট শিকারের ম্যাচ ১০ উইকেটে বড় ব্যবধানে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। এমনকি সম্প্রতি এই ভেন্যুতে সফরকারী স্পিনারদের খেলতেও হিমশিম খেতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে।
২০২২ সালে পাকিস্তানের দুই স্পিনার আবরার আহমেদ ও নোমান আলির বোলিং তোপে হার বরণ করেছিল লংকানরা। এমন পরিসংখ্যানেও বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করবে। এ ছাড়াও কলম্বোর শহর বাংলাদেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। কারণ এই শহরেই নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের শততম ম্যাচ খেলেছিল টাইগাররা। ২০১৭ সালে ওই টেস্ট ৪ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। যা এখনও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে একমাত্র জয় টাইগারদের। তবে ওই টেস্টের ভেন্যু ছিল কলম্বোর পি সারা ওভাল। এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়ে মাত্র ১টিতে জিতেছে, ৬টি ড্র এবং ২০টি টেস্টে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
শান্ত বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলে তবে পরিসংখ্যানে পরিবর্তন আনা সম্ভব,‘আমরা জানি শ্রীলঙ্কা আমাদের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ এবং তাদের বিপক্ষে আমাদের রেকর্ড ভালো নয়। তবে আমরা যদি তিনটি বিভাগেই আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারি, তা হলে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারাতে পারব।’ মিরাজ ফেরায় বাদ পড়তে পারেন প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ওপেনার এনামুল হক বিজয়। দুই ইনিংসে যথাক্রমেÑ ০ ও ৪ রান করেছিলেন তিনি। অনুশীলনে আঙুলে চোট পেয়েছিলেন শান্ত।
তবে মঙ্গলবার কোচ জানিয়েছেন, ফিট অধিনায়ক খেলছেন আজ। গলে মুশফিক-শান্ত সফল হলেও জাকের আলী অনিক (৮ ও ২), এনামুল হক বিজয় (০ ও ৪) নিজেকে সেই ম্যাচে মেলে ধরতে পারেননি। মিরাজ ফেরায় এক ব্যাটার বাদ দিয়ে খেললে বিজয়-জাকেরের যেকোনো একজনের কলম্বো টেস্টের একাদশ থেকে বাদ পড়া নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় টেস্টে নাঈম,তাইজুল, মিরাজÑএই তিন স্পিনারের সঙ্গে দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা খেলবেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২০২৭ চক্রের প্রথম সিরিজ।