ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

ফোনের ডেটা ও চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে? দায়ী কিছু ‘ভ্যাম্পায়ার’ অ্যাপ্লিকেশন

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ২৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৫৫, ২৪ জুন ২০২৫

ফোনের ডেটা ও চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে? দায়ী কিছু ‘ভ্যাম্পায়ার’ অ্যাপ্লিকেশন

ছবি: প্রতীকী

হাতে স্মার্টফোন থাকলে ইন্টারনেট ও চার্জ নিয়ে অনেকেই নিশ্চিন্ত থাকতে চান। কিন্তু অনেক ব্যবহারকারীই অভিযোগ করেন, মোবাইল ডেটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে বা ফোন তেমন ব্যবহার না করলেও ব্যাটারি ক্রমেই কমে আসছে। এমন পরিস্থিতির পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে কিছু অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, যেগুলো ব্যবহারকারীর অজান্তেই ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে এবং অতিরিক্ত ডেটা ও চার্জ খরচ করে।

প্রযুক্তিবিদদের মতে, এসব অ্যাপ কার্যত ফোনের ব্যাটারির ‘ভ্যাম্পায়ার’। অ্যাপের নকশাগত ত্রুটি, অনিয়ন্ত্রিত ব্যাকগ্রাউন্ড কার্যক্রম, স্বয়ংক্রিয় আপডেট, লোকেশন সার্ভিস এবং ঘনঘন পুশ নোটিফিকেশন—সব মিলিয়ে এগুলো ফোনের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে দেয়।

ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা অ্যাপের কাণ্ড

অনেক অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো সরাসরি ব্যবহার না করলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে তথ্য আদান-প্রদান করে চলে। যেমন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ই-মেইল বা নিউজ অ্যাপ নিয়মিত ডেটা আপডেট করতে গিয়ে ব্যাটারি ও ডেটা দুই-ই শেষ করে। অনেক অ্যাপ আবার ‘প্রিফেচিং’ পদ্ধতিতে আগেভাগেই তথ্য ডাউনলোড করে রাখে—যার ফলে ডেটা খরচ আরও বাড়ে।

নেভিগেশন অ্যাপে বাড়তি চাপ

গুগল ম্যাপস বা ওয়েজের মতো অ্যাপ ব্যবহারের সময় লোকেশন বারবার আপডেট নিতে গিয়ে ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এসব অ্যাপ সক্রিয় না রাখলে রাস্তায় দুর্ঘটনা বা জ্যামের তথ্য জানা সম্ভব হয় না, তাই এগুলো প্রায় সবসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকে।

ভিপিএনেও বাড়তি খরচ

ভিপিএন অনেকেই ব্যবহার করেন নিরাপত্তার কারণে। কিন্তু গবেষণা বলছে, ভিপিএন সক্রিয় থাকলে মোবাইল ডেটা খরচ ৪ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। কারণ, প্রতিটি ডেটা প্যাকেট এনক্রিপ্ট করে পাঠাতে গিয়ে এটি বাড়তি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে।

পুশ নোটিফিকেশন ও প্রসেসরের চাপ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ই-মেইল অ্যাপ বারবার নোটিফিকেশন পাঠায়। এতে শুধু ডেটাই নয়, ফোনের প্রসেসরও অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে—যা ব্যাটারির আয়ু হ্রাস করে।

স্ট্রিমিং অ্যাপের ডেটা গলাধঃকরণ

ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই কিংবা ডিজনি+—এই অ্যাপগুলো ভিডিও বা অডিও চালানোর সময় প্রচুর ডেটা খরচ করে। বিশেষ করে স্পটিফাই ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে এবং লাইব্রেরির সঙ্গে নিয়মিত সিঙ্ক করে, যা ফোনের চার্জ ও ডেটা দুটোই কমায়। তবে ডেটা সেভার মোড চালু রাখলে কিছুটা সাশ্রয় সম্ভব।

‘অটো প্লে’ ফিচার

সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করতে করতেই চলতে শুরু করে ভিডিও? এই অটো প্লে-ই একদিকে ব্যাটারি খরচ বাড়ায়, অন্যদিকে ডেটা শেষ করে দেয় অনায়াসেই। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব—সব অ্যাপেই এই ফিচার রয়েছে, যা ব্যবহারকারী চাইলে সেটিংস থেকে বন্ধ করতে পারেন।

গুগল প্লে স্টোরের স্বয়ংক্রিয় আপডেট

ফোনে একাধিক অ্যাপ থাকলে গুগল প্লে স্টোর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেগুলো আপডেট করে নেয় ব্যাকগ্রাউন্ডে। এই প্রক্রিয়াতেও প্রচুর ডেটা খরচ হয়, বিশেষ করে ওয়াই-ফাই ছাড়া মোবাইল ডেটা ব্যবহারের সময়।

ক্ষতিকর অ্যাপও হতে পারে দায়ী

মাঝেমধ্যে গুগল প্লে স্টোরেও ক্ষতিকর অ্যাপ প্রবেশ করে ফাঁকি দিয়ে। এসব অ্যাপ প্রথমে নিরীহ মনে হলেও পরে গোপনে ডেটা ও চার্জ খরচ করে ব্যবহারকারীর অজান্তেই।

কী করবেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোনের সেটিংস থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা রেস্ট্রিক্ট, অটো আপডেট ও অটো প্লে ফিচার বন্ধ রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন অক্ষম করে রাখলে অনেকটাই সাশ্রয় করা সম্ভব। সন্দেহজনক অ্যাপ সরিয়ে ফেলা এবং ভিপিএন সীমিত ব্যবহারেরও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

 

সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ।

রাকিব

আরো পড়ুন  

×