
ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, কাঁকড়াবিছার বিষ থেকে সংগ্রহ করা এক বিশেষ অণু স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যামাজনের ‘ব্রোথিয়াস অ্যামাজোনিকাস’ (Brotheas amazonicus) নামের একধরনের বিছার বিষে থাকা একটি প্রাকৃতিক যৌগ—BamazScplp1—স্তন ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
কেমোথেরাপি ওষুধের মতোই কাজ করে বিষের অণু
সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ অণুর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি FAPESP Week France-এ উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, গবেষণাগারে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে—BamazScplp1 অণুটি স্তন ক্যান্সার কোষে এমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা বহুল ব্যবহৃত কেমোথেরাপি ওষুধ Paclitaxel-এর সঙ্গে তুলনীয়।
গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক এলিয়ানে কান্দিয়ানি আরান্তেস বলেন, ‘আমরা বায়োপ্রস্পেক্টিংয়ের মাধ্যমে বিছার এক প্রজাতির বিষে এমন একটি অণু চিহ্নিত করেছি, যা স্তন ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে।’
প্রাকৃতিক বিষ নয়, ল্যাবে তৈরি করা হচ্ছে
বিছা থেকে সরাসরি বিষ সংগ্রহ না করে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন heterologous expression নামের একটি প্রযুক্তি। এতে বিষ তৈরির জন্য দায়ী জিন অন্য একটি জীব (যেমন: ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট)–এর মধ্যে সংযোজন করে ল্যাবে বড় পরিসরে বিষ উৎপাদন করা হয়।
গবেষক আরান্তেস বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এখন হলো, BamazScplp1-সহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় যৌগ Pichia pastoris নামের একপ্রকার ইস্টের মাধ্যমে তৈরি করা।’
কোষ ধ্বংসে ‘নেক্রোসিস’ প্রক্রিয়া
পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই পেপটাইড স্তন ক্যান্সার কোষে নেক্রোসিস নামে পরিচিত একটি পদ্ধতিতে কোষ ধ্বংস করে, যা অন্যান্য বিছার বিষে পাওয়া অণুর মতোই কার্যকর। গবেষকদের মতে, এটি ভবিষ্যতের স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।
স্তন ক্যান্সার: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, স্তন ক্যান্সার নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ক্যান্সার। Nature Medicine-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতি ২০ জন নারীর মধ্যে একজনের জীবদ্দশায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ২৩ লাখ নতুন স্তন ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয় এবং ৬.৭ লাখ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি বর্তমান হার অব্যাহত থাকে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৩২ লাখ নতুন আক্রান্ত এবং ১১ লাখ মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
নতুন সম্ভাবনা
ব্রাজিলিয়ান বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে নতুন ধরনের ওষুধ তৈরির সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যেখানে বর্জ্য বা বিষের মতো উপাদানকে পরিণত করা যেতে পারে জীবন বাঁচানোর অস্ত্রে। তবে এখনো অনেক পথ বাকি। পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও মানবদেহে প্রয়োগযোগ্যতা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত ওষুধ আকারে এটি বাজারে আসবে না। তবুও গবেষণাটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব