ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

যেভাবে হ্যাকিং ও নজরদারির শিকার হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ, সুরক্ষায় করণীয়

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২৪ জুন ২০২৫

যেভাবে হ্যাকিং ও নজরদারির শিকার হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ, সুরক্ষায় করণীয়

ছবি: প্রতীকী

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনায় বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার থেকে নাগরিকদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল ইরানি কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের হাতে তথ্য চলে যাচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে তারা বলছে, এই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠানো হচ্ছে। যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

অন্যদিকে, হোয়াটসঅ্যাপের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা জানায়, ‘এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আমাদের সেবা বন্ধ করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, ঠিক তখনই যখন মানুষের এটি সবচেয়ে বেশি দরকার।’ প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, তারা ব্যবহারকারীর অবস্থান বা ব্যক্তিগত বার্তা পর্যবেক্ষণ করে না।

নিরাপদ হলেও ‘অভেদ্য’ নয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী হলেও তা একেবারে অপ্রবেশযোগ্য নয়। ইতিপূর্বে ইসরায়েলসহ কয়েকটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অ্যাপটি হ্যাক করার নজির রয়েছে। বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহৃত ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে গোপন বার্তা পড়ার চেষ্টা হয়েছে।

৩০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী

ফ্রি মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ ব্যবহার করেন। এতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেক্সট, অডিও, ভিডিও, ছবি ও কল করার সুবিধা রয়েছে। যদিও অ্যাপটি নিজেই বার্তার কনটেন্ট পড়ে না, তবে সেটি পাঠানো ও গ্রহণের মাঝখানে আক্রমণের শিকার হতে পারে।

সাইবার শক্তিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল

যুক্তরাষ্ট্র সাইবার সক্ষমতার দিক দিয়ে বিশ্বে শীর্ষে থাকলেও, ইসরায়েলও এ ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। ইসরায়েলের ‘ইউনিট ৮২০০’ সাইবার ইউনিট বিশ্ববিখ্যাত। তাদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও সাইবার আক্রমণ-প্রতিরক্ষা কৌশল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত।

বিশ্বের শীর্ষ ১০ সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সাতটির গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে ইসরায়েলে। ফলে দেশটি প্রযুক্তিগতভাবে অনেক আধুনিক স্পাইওয়্যার নির্মাণে সক্ষম।

‘পেগাসাস’ কেলেঙ্কারি

২০১৯ সালে ইসরায়েলভিত্তিক এনএসও গ্রুপের তৈরি ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার হোয়াটসঅ্যাপের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ১,৪০০ জনের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদরা। এ ঘটনার জেরে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত মেটা ও হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এনএসওকে।

আরেক ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান পারাগন সলিউশনস সম্প্রতি ১০০টির বেশি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে নজরদারি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘স্পিয়ার ফিশিং’-এর ভয়াল কৌশল

এই ধরনের হ্যাকিং সাধারণত স্পিয়ার ফিশিংয়ের মাধ্যমে হয়, যেখানে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রতারণামূলক ইমেইল বা মেসেজ পাঠানো হয়। এগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে একটি ভুয়া লিংকে ক্লিক করিয়ে বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করিয়ে স্পাইওয়্যার ইনস্টল করানো হয়। একবার ডিভাইসে প্রবেশ করলেই সব কিছু— এমনকি এনক্রিপ্ট করা বার্তাও পড়ে ফেলতে পারে হ্যাকাররা।

সুরক্ষায় করণীয়

  • অচেনা ইমেইল বা মেসেজে প্রেরকের পরিচয় যাচাই করুন।

  • জরুরি বার্তা হিসেবে মেসেজ এলে সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করবেন না।

  • দুই স্তরের নিরাপত্তা (Two-factor authentication) চালু রাখুন।

  • সফটওয়্যার ও অ্যাপস নিয়মিত আপডেট করুন।

  • সন্দেহজনক ফাইল ডাউনলোড থেকে বিরত থাকুন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যতই সুরক্ষিত হোক না কেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবহারকারীদের সচেতনতাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

 

সূত্র: দ্য কনভারসেশন।

রাকিব

আরো পড়ুন  

×