ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

সাইলেন্ট না করেও ফোনের নীরবতায় গুরুত্বপূর্ণ কল মিস: কারণ ও সমাধান জানালেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:২১, ২৪ জুন ২০২৫

সাইলেন্ট না করেও ফোনের নীরবতায় গুরুত্বপূর্ণ কল মিস: কারণ ও সমাধান জানালেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি: সংগৃহীত

আজকের স্মার্টফোননির্ভর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোনকলের অপেক্ষায় থাকা মানেই এক ধরনের মানসিক উত্তেজনা। হোক সেটা অফিসের বসের ফোন, নতুন চাকরির ইন্টারভিউ, কিংবা প্রিয়জনের জরুরি খবর—ফোনটি যেন ঠিকমতো বাজে, সেটাই তখন সবচেয়ে বড় প্রার্থনা। অথচ এমন অনেকেই আছেন, যারা শতবার চেক করেও নিশ্চিত হন—ফোন সাইলেন্টে নেই, ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোডও চালু নয়। তারপরও হঠাৎ করেই আসে একটি ‘মিসড কল’ নোটিফিকেশন, অথচ ফোন তো একটিবারও বাজেনি!

এই রহস্যের পেছনে রয়েছে বর্তমান মোবাইল নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তির কিছু জটিল বাস্তবতা।

ফোনকল কাজ করে কীভাবে?

বর্তমানে মোবাইল কল করার সময় ব্যবহার করা হয় ৪জি ও ৫জি নেটওয়ার্ক। কলটি সংযুক্ত হওয়ার জন্য দুই পক্ষের ফোনই একটি ‘আইপি মাল্টিমিডিয়া সাবসিস্টেম’ (IMS)-এর সাথে রেজিস্টার হতে হয়। IMS-এর মাধ্যমেই সম্ভব হয় ভয়েস কল, টেক্সট মেসেজ ও ভিডিও কমিউনিকেশন একত্রে পরিচালনা।

কলার যখন একটি নম্বরে ফোন করেন, তখন তাদের মোবাইল অপারেটর সেই রিকোয়েস্টটি রিসিপিয়েন্টের (যার ফোনে কল যাচ্ছে) ফোনে পাঠিয়ে দেয়। তখনই ফোনটি বাজতে শুরু করে। কিন্তু এই পুরো প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি ধাপে ব্যর্থতা বা বিলম্ব হলেই সমস্যা ঘটে।

ডেড জোন, সিগন্যাল ফেইলিওর ও IMS গ্লিচ

যদি কোনো কারণে ফোনটি IMS-এর সাথে রেজিস্টার না হতে পারে—যেমন সফটওয়্যার সমস্যা, সিম কার্ডের গণ্ডগোল, বা অপারেটরের নেটওয়ার্ক ত্রুটি—তবে ফোনে কলের সংকেত পৌঁছায় না। এমনকি বাজেও না।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো মোবাইল টাওয়ারের মধ্যে হস্তান্তর (handover)। ধরুন আপনি গাড়িতে চলছেন বা কোনো বড় ভবনের ভিতরে ঢুকছেন—তখন একটি টাওয়ার থেকে আরেকটিতে কলের সংকেত ট্রান্সফার হয়। কিন্তু এই হস্তান্তর যদি সঠিকভাবে না হয় বা বিলম্বিত হয়, তাহলেও ফোন বাজার আগেই কল মিসড হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

অন্যদিকে যেসব এলাকাকে ‘ডেড জোন’ বলা হয়—যেখানে সিগন্যাল দুর্বল বা নেই—সেখানে বসে থাকলেও ফোনটি কল গ্রহণ করতে পারে না।

৫জি যুগে পুরনো প্রযুক্তির সমস্যা

বর্তমানে মোবাইল কলের জন্য ব্যবহৃত হয় VoLTE (Voice over LTE) বা ৫জি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে VoNR (Voice over New Radio)। কিন্তু অনেক ফোনে এগুলো ডিফল্টভাবে বন্ধ থাকে বা অপারেটর সাপোর্ট করে না। তখন কলটি ৩জি নেটওয়ার্কে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে—যা কিছু কিছু দেশে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

এই ব্যাকআপ ফেইল করলে ফোন বাজে না বা সরাসরি ভয়েসমেইলে চলে যায়।

অ্যান্ড্রয়েড সেটিংস, ব্যাটারি সেভার ও থার্ড পার্টি অ্যাপ

অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ‘ব্যাটারি অপটিমাইজেশন’ ফিচার এমনভাবে কাজ করে, যাতে ফোন অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে পারে না। এর ফলে ফোনকল এলে সেটি রিসিভ করার আগেই মিসড কল হয়ে যায়।

আবার কিছু থার্ড পার্টি অ্যাপ—যেমন কল ব্লকার, অ্যান্টিভাইরাস বা মেসেজিং অ্যাপ—কখনো কখনো ফোনের নোটিফিকেশন সিস্টেমে হস্তক্ষেপ করে, যার ফলে কল এলে ফোন বেজে ওঠে না।

সমাধান কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সাবধানতা মেনে চললে অনেক সময় এ ধরনের সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব:

  • ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংসে গিয়ে নিশ্চিত হোন VoLTE বা VoNR চালু আছে
  • ফোনটি একবার রিস্টার্ট দিন, প্রয়োজনে এয়ারপ্লেন মোড অন-অফ করুন
  • ‘ব্যাটারি অপটিমাইজেশন’ অপশন থেকে ফোন অ্যাপকে বাদ দিন
  • মোবাইল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিন তারা VoLTE/VoNR সাপোর্ট করে কিনা

তবে সবকিছুর পরেও, প্রযুক্তিগত জটিলতা ও দুর্বল কভারেজের কারণে কখনো কখনো ফোনকল মিস হয়ে যেতেই পারে। এমন পরিস্থিতিতে দোষ না দিয়ে বরং বলা যায়—এটা একপ্রকার বৈজ্ঞানিক অজুহাত।

 

সূত্র: দ্য কনভারসেশন।

 

রাকিব

আরো পড়ুন  

×