ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

বেড়েছে টমেটোর দাম, তবুও ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘লাখ টাকার লোকসান’

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ২০:১২, ২৪ জুন ২০২৫

বেড়েছে টমেটোর দাম, তবুও ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘লাখ টাকার লোকসান’

পঞ্চগড় জেলার কৃষিজমিতে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর চাষ হয়ে আসছে। শুরুতে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য পাওয়ায় আশপাশের গ্রামের চাষিরাও এই চাষে ঝুঁকেছেন। গ্রীষ্মকাল জুড়ে পুরো এলাকা যেন রূপ নেয় টমেটো বাগানে।

চাষিরা জানান, ১ বিঘা জমিতে টমেটো চাষে সার, বীজ, সেচ ও শ্রমিক খরচ মিলে খরচ পড়ে প্রায় ২৫–২৭ হাজার টাকা। এবার প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে গড়ে ১০০–২০০ মণ। জমি থেকেই টমেটো বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৬০০ টাকা মণ দরে। উৎপাদন খরচ বাদে একেক বিঘা থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে প্রতিবছরই গড়ে ৬০–৭০ হাজার টাকা লাভের মুখ দেখছেন প্রান্তিক কৃষকেরা।

এই লাভজনক চাষের কারণে ধান, পাট বা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে দিন দিন টমেটোর দিকে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকেরা। তবে চরম এক সমস্যা হলো সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মৌসুমের শেষদিকে প্রচুর টমেটো পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা কৃষকের মুনাফাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

টমেটো সংরক্ষণের জন্য জেলায় নেই কোনো হিমাগার বা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। থাকলে প্রতিবছরের এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি রোধ করা যেত। স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোগ না থাকায় চাষিরা অনেক সময় বাধ্য হয়ে টমেটো ফেলে দিতে বাধ্য হন।

এদিকে মৌসুমজুড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে জেলা সদরের বিভিন্ন জায়গায় আড়ত বসান। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর সহায়তায় চাষিদের খেত থেকে কাঁচা টমেটো সংগ্রহ করে তা আড়তে সংরক্ষণ করেন। পরবর্তীতে টমেটো পাকিয়ে ক্রেটভর্তি করে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ করা হয়।

প্রতিটি ক্রেট ২৬ কেজি ধারণক্ষমতার, যা মৌসুমের শুরুতে বিক্রি হতো ৪০০–৬০০ টাকা দরে। তবে এখন সেই ক্রেটই বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত। তবুও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ—এতে কোনো লাভ নেই, উল্টো লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে রয়েছেন তাঁরা।

একজন আড়তদার বলেন, “এখন দাম বাড়লেও আমাদের আড়তে আর তেমন টমেটো নেই। মৌসুম শেষের দিকে, হাতে ধরার মতো মাল নেই। একবারে বেশি মাল তুলতে না পারলে লাভ হয় না। বরং রেন্ট, শ্রমিক, পরিবহন সব খরচ মিলে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।”

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুবোধ চন্দ্র রায় জানান, “এ বছর জেলার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে এবং চাষিরাও বেশ লাভবান হয়েছেন।”

তবে স্থানীয় কৃষকেরা মনে করছেন, এই লাভ টেকসই হবে না যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকে। প্রশাসন ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে জেলায় হিমাগার ও টমেটো প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন এখন সময়ের দাবি।

মিমিয়া

×