ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

মাদকাসক্তদের জন্য পৃথক কারাগার নির্মাণ হবে ॥ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২০, ২৬ জুন ২০২৫

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

.

মাদকাসক্তদের জন্য সরকারের বিভাগীয় পর্যায়ে পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে কোনো দেশের উন্নতির প্রধান নিয়ামক হলো কর্মক্ষম বিপুল যুবশক্তি। ভবিষ্যতে উন্নত এবং সফল রাষ্ট্রের কাতারে উপনীত হতে হলে আমাদের এ তরুণ সমাজকে মাদক থেকে অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকদ্রব্যের অবৈধ চাহিদা হ্রাস এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ২৬ জুনকে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সরকারিভাবে নানা কর্মসূচিতে পালন করা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি সাতটি বিভাগীয় শহরে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি বিভাগীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই নানাভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশে মাদক চোরাচালানের একটি ভয়াবহ বিষয় হলো নারী, শিশু এবং কিশোরদের এ গর্হিত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা যেমন বাড়ছে তেমনই তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
এ সমস্যা সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক ড্রাগসের আবির্ভাবের ফলে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারজনিত সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে। নতুন নতুন এসব মাদক নিয়ে আমাদের নতুনভাবে কর্মকৌশল তৈরি করতে হচ্ছে। নতুন ধরনের মাদক সম্পর্কে দেশের সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা সজাগ রয়েছে এবং এগুলোর বিস্তার রোধে উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।
মাদকের করাল গ্রাস থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে বর্তমান সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে বর্তমানে নিয়োজিত রয়েছে ২ হাজার ৯৪৩ জন। এর মধ্যে এনফোর্সমেন্টে নিয়োজিত রয়েছেন ১ হাজার ৬২২ জন। ৬৪টি জেলা কার্যালয়, ১টি বিশেষ জোন, ৮টি বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয় এবং ৮টি বিভাগীয় কার্যালয়ের সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশব্যাপী তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।অপরাধ দমনে কাজ করে এমন অন্যান্য সংস্থার জনবলের সঙ্গে তুলনা করলে এ সংখ্যা সীমিত এবং সংস্থার যানবাহন স্বল্পতাসহ অভিযান পরিচালনায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উন্নত উপকরণের অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে মাদকের বড় চালান জব্দের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ডের পাশাপাশি নোডাল এজেন্সি হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় এরই মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৪ প্রণীত হয়েছে এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রথম ব্যাচের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারকে ‘বহুমাত্রিক সমস্যা’ হিসেবে মন্তব্য করে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. হাসান মারুফ।

প্যানেল

×