
ছবি: প্রতীকী
সহানুভূতি মানবিক গুণ। কিন্তু সবসময় কি এই গুণ দেখানো উচিত? দীর্ঘদিনের খরার পরে যখন বৃষ্টি নামে, তখন যেমন মানুষ খুশি হয়, তেমনি যদি সেই বৃষ্টি থামতেই না চায়, তখন সেটাই হয়ে ওঠে দুর্যোগ। তেমনি অতিরিক্ত সহানুভূতি বা দয়া অনেক সময় আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে ফেলে দিতে পারে। কেউ কেউ এই দয়া বা সহানুভূতিকে দুর্বলতা হিসেবে ধরে নেয় এবং সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে।
তাই জানতে হবে—কার প্রতি সহানুভূতি দেখানো উচিত, আর কার ক্ষেত্রে তা থেকে বিরত থাকা ভালো। ইরানের প্রখ্যাত সুফি কবি শেখ ফরিদউদ্দিন আত্তার এবং শেখ সাদির উপদেশ অনুযায়ী এমন পাঁচ ধরনের মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখালে জীবনে অনুতপ্ত হতে হতে পারে।
১. যারা নিজেদের ভুলের দায় নিতে চায় না
এই শ্রেণির মানুষরা যেকোনো সমস্যায় পড়লেই অন্যকে জড়িয়ে ফেলে, কিন্তু নিজেরা সমাধানে উদ্যোগী হয় না। তারা জানে— আবেগে খেললে মানুষ পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু একবার যদি আপনি তাদের সহানুভূতি দেন, তারা তা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলবে। তারা নিজের দায়িত্ব কখনোই নেবে না, বরং আপনার সহানুভূতিকে নিজের অধিকার বলে ধরে নেবে।
২. যারা আপনাকে সহানুভূতির জন্য ব্ল্যাকমেইল করে
আপনি যদি সহজেই কারও দুঃখে পাশে দাঁড়ান, তাহলে কিছু মানুষ আপনাকে স্থায়ীভাবে দায়িত্বে বসাতে চাইবে। একবার যদি আপনি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারেন, তখন তারা আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারে কিংবা আপনাকেই অপরাধবোধে ভোগাতে শুরু করে। এমন আচরণে আপনি ধীরে ধীরে নিজেকে একা ও ব্যবহৃত বোধ করবেন।
৩. যারা শুধু দুঃখের দিনে আপনার কাছে আসে
এদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কেবল তখনই দেখা যায়, যখন তারা কিছু চায়। আপনি ভালো আছেন, উপকার করতে পারেন— তখনই তারা আপনাকে মনে রাখে। বিপদ বা অভাবের গন্ধ পেলে এরা পালিয়ে যায়। এদের জন্য অতিরিক্ত সহানুভূতি অপ্রয়োজনীয়।
৪. উগ্র ও গোয়ার প্রকৃতির মানুষ
এই শ্রেণির মানুষরা যুক্তি বোঝে না, কারও উপকারকেও মূল্য দেয় না। আপনি যতই সাহায্য করুন, তারা কখনোই কৃতজ্ঞ হবে না। বরং তারা সবসময় নিজেকে ঠিক মনে করে, ভুল স্বীকার করে না। তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখালে তা আপনার উপরই চাপ হিসেবে ফিরে আসবে।
৫. নিজের সন্তান
অবাক হলেও সত্য, সন্তানের প্রতিও সীমাহীন দয়া বিপদ ডেকে আনতে পারে। একজন পিতা বা মাতা যদি প্রতিটি চাওয়ায় সন্তানের পাশে দাঁড়ায়, তাকে সংগ্রাম থেকে রক্ষা করে, তাহলে সন্তান কখনো স্বনির্ভর হতে পারে না। প্রকৃত সহানুভূতি মানে তাকে নিজে পথ খুঁজে নিতে শেখানো। অতিরিক্ত আদরে গড়ে ওঠে পরনির্ভরশীলতা, যা ভবিষ্যতে তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সবশেষে বলা যায়, সহানুভূতি নিঃসন্দেহে একটি মহৎ গুণ। কিন্তু তা যেকোনো মানুষের প্রতি, যেকোনো পরিস্থিতিতে দেখানো উচিত নয়। সহানুভূতিরও আছে সীমা। না হলে আপনি একদিন নিজেই এমন অবস্থায় পড়বেন, যেখানে আপনাকে সহানুভূতি দেখানোর মতো কেউ থাকবে না। তাই সহানুভূতি দেখান বুঝেশুনে, সঠিক মানুষ ও প্রেক্ষাপটে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/XlhQde3u2kg?si=hUR91h-jr3eLFBKB
এম.কে.