
ফুসফুস ক্যান্সার সাধারণত শরীরের অভ্যন্তরে থেকে নীরবে বাড়তে থাকে, যতক্ষণ না এটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনেকেই জানেন না, এই ক্যান্সার শরীরের ত্বকেও দিতে পারে কিছু অপ্রত্যাশিত সংকেত। বিশেষ করে যখন এটি শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে বা ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, তখন ত্বকে নানা পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো, কীভাবে ফুসফুস ক্যান্সার ত্বকে প্রভাব ফেলে, কোন লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে এবং চিকিৎসাজনিত ত্বকের পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত।
ফুসফুস ক্যান্সার: ত্বকে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে
ফুসফুস ক্যান্সারের কারণে তৈরি কিছু বিশেষ সিনড্রোমের ফলে ত্বকে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে:
হলুদ ত্বক
যখন ক্যান্সার লিভার বা অগ্ন্যাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিস দেখা দিতে পারে। এর ফলে ত্বক বা চোখের সাদা অংশ হলুদাভ হয়ে যায়।
ত্বকে গুটির মতো ফোলাভাব
ক্যান্সার যখন ত্বকের নিচে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ত্বকে গোলাকার, শক্ত এবং চামড়ার রঙের গুটি দেখা দিতে পারে। এগুলো সাধারণত ব্যথাহীন হলেও মাঝে মাঝে ঘা হয়ে যেতে পারে। গুটি দেখা দিতে পারে বুক, পেট, মাথা ও গলায়।
চুলকানি
লিভারে ছড়িয়ে পড়লে শরীরে পিত্ত লবণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ত্বকে তীব্র চুলকানি দেখা দিতে পারে।
সহজে রক্তাক্ত হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া
স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সারের কারণে কুশিং’স সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। এতে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ত্বকে সহজে রক্তপাত, বেগুনি দাগ, মুখ ফুলে যাওয়া এবং চোখা দাগ তৈরি হতে পারে।
মুখের এক পাশে ঘাম হওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া
ফুসফুসের ওপরের অংশে পাঙ্কোস্ট টিউমার তৈরি হলে ব্র্যাকিয়াল প্লেক্সাস নামক স্নায়ুগুচ্ছের উপর চাপ পড়ে। এর ফলে হর্নার সিনড্রোম দেখা দিতে পারে, যার একটি লক্ষণ হলো মুখের এক পাশে ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া।
মুখ লাল হয়ে যাওয়া (Facial flushing)
কিছু ফুসফুস ক্যান্সার হরমোন জাতীয় পদার্থ নিঃসরণ করে, যেমন সেরোটোনিন। এটি ডায়রিয়ার পাশাপাশি মুখ লাল করে তুলতে পারে।
এছাড়া ‘সুপিরিয়র ভেনা কেভা সিনড্রোম’-এর কারণে মুখ ফুলে লালচে বা নীলচে হয়ে যেতে পারে, শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং শরীরের ওপরের অংশে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
হেলিওট্রোপ র্যাশ ও গট্রন প্যাপিউলস
ত্বকের চারপাশে বেগুনি-লালচে র্যাশ দেখা যেতে পারে, যাকে হেলিওট্রোপ র্যাশ বলা হয়। আবার আঙুল, কনুই বা হাঁটুর গিটে গাঢ় লাল দানা বা দাগ দেখা দিতে পারে, যাকে গট্রন প্যাপিউলস বলে। এই লক্ষণগুলো ডারমাটোমায়োসাইটিস নামক রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যা ফুসফুস ক্যান্সারের সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে।
চিকিৎসাজনিত ত্বকের পরিবর্তন
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসার সময়ও ত্বকে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
রেডিওথেরাপি: আক্রান্ত অংশে ত্বক সানবার্নের মতো লাল হয়ে যেতে পারে এবং এটি যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
কেমোথেরাপি: রক্ত জমাট বাঁধার কোষ হ্রাস পাওয়ায় ত্বকে সহজে রক্তপাত বা কালশিটে দাগ দেখা দিতে পারে।
ইমিউনোথেরাপি: যেমন, কীট্রুডা (পেম্ব্রোলিজুমাব) এবং ওপডিভো (নিভোলুমাব)-এর মতো ওষুধে ত্বক শুষ্ক বা চুলকানিযুক্ত হয়ে যেতে পারে।
টার্গেটেড থেরাপি: এই ধরনের ওষুধে ত্বকে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
যেমন, আফাটিনিবে মাথা, বুকে ব্রণের মতো র্যাশ, হাত-পায়ে লালভাব।
জেফিটিনিব ও এরলটিনিবে শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত এবং ফ্ল্যাকি ত্বক।
নিনটেডানিব, ক্রিজোটিনিব ও সেরিটিনিবের ক্ষেত্রেও ত্বকে র্যাশ, খুশকি বা দানা পড়তে দেখা যায়।
ফুসফুস ক্যান্সার মানেই যে ত্বকে লক্ষণ দেখা দেবে, তা নয়। তবে রোগটি ছড়িয়ে পড়লে, কিছু নির্দিষ্ট সিনড্রোমের কারণে কিংবা চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। হলুদ ত্বক, চুলকানি, সহজে ফোলা বা দাগ পড়া, মুখের ঘাম বা রঙের পরিবর্তন এসব ত্বকজনিত লক্ষণকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ত্বকে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
সূত্র:https://tinyurl.com/y4eh9fup
আফরোজা