
ছবি: সংগৃহীত।
ডেনিম প্যান্ট? সেটাও আবার ভোগ ম্যাগাজিনের কাভারে? এমন বিস্ময় দিয়েই শুরু হয়েছিল আনা উইনটুরের যুগান্তকারী যাত্রা মার্কিন ভোগ-এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে।
সালটা ছিল ১৯৮৮। ৯৬ বছরে পা দেওয়া ভোগ-এর সেই নভেম্বর সংখ্যার কাভারই ছিল ভবিষ্যতের দিকদর্শন। সেটাই জানান দিচ্ছিল—আসছে এক নতুন ফ্যাশনযুগ, যেখানে ‘হাই ফ্যাশন’ ও ‘স্ট্রিট স্টাইল’ একসঙ্গে হাঁটবে।
সেই কাভার দেখে প্রথমে ভোগ-এর মুদ্রণকর্মীরা মনে করেছিলেন, “এটি কি ভুল ছবি পাঠানো হয়েছে?” কারণ এতটাই ভিন্ন ছিল সেটি। নিজের ২০১২ সালের একটি স্মৃতিচারণে আনা উইনটুর বলেন, ইসরায়েলি মডেল মিকায়েলা বারকু, মাত্র ১৯ বছর বয়সে, ছিলেন সেই কাভারের মুখ। ফটোগ্রাফি করেছিলেন পিটার লিন্ডবার্গ, স্টাইলিংয়ে ছিলেন কার্লিন সার্ফ দ্য দুদ্যুজেল।
কিন্তু মিকায়েলার মুখে ছিল খোলা হাসি, মুখে কোনও কনট্যুর নয়, হাতে গয়নার ভার নয়—শুধু ৫০ ডলারের স্টোনওয়াশড জিনস আর একটি দামী ল্যাক্রোয়া টপ (মূল্য ১০ হাজার ডলার)। তার চুল ছিল এলোমেলো, হাসি উজ্জ্বল, আর ছবি দেখে মনে হচ্ছিল যেন স্বাভাবিক কোনও মুহূর্ত ধরে রাখা হয়েছে। ল্যাক্রোয়া-র গলায় ক্রস চিহ্ন ছিল একমাত্র ‘গ্ল্যামার’ উপাদান।
উইনটুর বলেন, “অনেকে নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়েছিল: হাই-লো মিক্স, মডেল প্রেগন্যান্ট, ধর্মীয় বার্তা। কিন্তু আসলে কিছুই না। আমি শুধু ছবিটা দেখে বুঝে গিয়েছিলাম—সময় বদলাচ্ছে। আর কোনও কাভার যদি সেই বার্তাই দিতে পারে, তাহলে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।”
আর এটাই যেন ছিল আনা উইনটুরের ‘মিডাস টাচ’, যা গত ৩৭ বছর ধরে বিশ্ব ফ্যাশনে নতুন ধারা তৈরি করে চলেছে। মেট গালার রূপান্তর তার অন্যতম প্রমাণ—এক সময়ের আভিজাত্যপূর্ণ ডিনার এখন হয়ে উঠেছে বিশ্ব ফ্যাশনের সবচেয়ে বড় রাত।
তবে এই দীর্ঘ পথচলার একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে সম্প্রতি। বৃহস্পতিবার রাতে ফ্যাশন দুনিয়া স্তব্ধ হয়ে যায় খবর শুনে—আনা উইনটুর মার্কিন ভোগ-এর প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
তবে এটি কোনো পরিপূর্ণ বিদায় নয়। ৭৫ বছর বয়সী উইনটুর থাকছেন ভোগ-এর গ্লোবাল এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর পদে এবং কনডে ন্যাস্ট-এর চিফ কনটেন্ট অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ, তিনি ভোগ-এর পাশাপাশি ভ্যানিটি ফেয়ার, জিকিউ, গ্ল্যামারসহ কনডে ন্যাস্ট-এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনারও দায়িত্বে থাকছেন।
আমেরিকান ভোগ-এর ইতিহাসে আনা উইনটুর দ্বিতীয় দীর্ঘস্থায়ী সম্পাদক। প্রথম ছিলেন এডনা উলম্যান চেইস, যিনি ১৯১৪ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছর দায়িত্বে ছিলেন। আনা উইনটুরের দায়িত্বকাল থামল মাত্র এক বছর কমে—৩৭ বছরে।
অবসানের সঙ্গে সঙ্গে যেন নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। আনা উইনটুরের যাত্রা শেষ নয়—এ যেন কেবল আরও এক মহাসময়ের শুরু।
সূত্র: https://short-link.me/15PQ3
মিরাজ খান