ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

চরম সংকটে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্যাহত চিকিৎসা সেবা

জাহিদুর রহমান, মেহেরপুর 

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ২৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:২৯, ২৭ জুন ২০২৫

চরম সংকটে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্যাহত চিকিৎসা সেবা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চরম সংকটে রয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক সংকট, জেনারেটর নষ্ট, ওষুধ ঘাটতিসহ নানামুখী সমস্যায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন লাখ মানুষের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল এই হাসপাতাল, কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনায় রোগীদের সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতেই পড়তে হচ্ছে।

১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ২০০৬ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালে একটি নতুন ভবনও নির্মাণ করা হয়। তবে বাস্তবচিত্র ভিন্ন। ২৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ইনডোর ও আউটডোর সেবা চালাতে হচ্ছে সেকমো (সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) ও সাব-সেন্টারের চিকিৎসকদের দিয়ে।

অপর্যাপ্ত শয্যার কারণে ধারণক্ষমতার তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় অনেক রোগীকে মেঝে কিংবা বারান্দায় ঠাঁই নিতে হচ্ছে। বহির্বিভাগেও চিকিৎসা পেতে রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ একটি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও গত তিন বছর ধরে সেখানে কোনো অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক বাইরে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে অপারেশন করেন। যদিও সরকারি হাসপাতালেই বিনামূল্যে এই সেবা দেওয়া সম্ভব।

শিমুলতলা গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাবীর সিজারিয়ান অপারেশন স্থানীয় একটি ক্লিনিকে করাতে হয়েছে, খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশনের সুযোগ থাকলে এক টাকাও খরচ হতো না।” মিনাপাড়ার আজিজুল হক জানান, “আমার স্ত্রীর অপারেশন করাতে হয়েছে স্থানীয় রাজা ক্লিনিকে। ওষুধ, বেড ভাড়া ও ডাক্তার বাবদ খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা।”

রোগীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় ওষুধও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এমনকি রোগীদের ব্যবহৃত বিছানার চাদর ছেঁড়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও নেই বললেই চলে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর থাকলেও সেটি অচল থাকায় ওয়ার্ডে অন্ধকার নেমে আসে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, অনেক চিকিৎসক এখানে যোগদান করলেও কিছু প্রভাবশালী ক্লিনিক মালিকের হুমকি ও দুর্ব্যবহারের কারণে তাঁরা টিকতে চাননি। এতে সাধারণ, বিশেষ করে গরিব রোগীরা সরকারি সেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদুর রহমান স্বীকার করেছেন, “চিকিৎসক ও অন্যান্য সংকট রয়েছে, আমরা ইতিমধ্যে তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. একেএম আবু সাঈদ বলেন, “গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সংকটসহ সব সমস্যা দ্রুত সমাধান করে আধুনিক ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা হবে।”

সায়মা ইসলাম

×