
ছবি: জনকণ্ঠ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের ইসলামিক আলেম-উলামা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, এবারের নির্বাচনে সকল ইসলামী শক্তির মধ্যে একটা নির্বাচনী ঐক্য থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন এবং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যে অচিরেই একটা সমঝোতা হতে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। এই ইসলামী শক্তির ধারাকে অক্ষুন্ন রেখে সকল আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আমাদের দেশপ্রেম, জাতিসত্ত্বা, ইসলামী মূল্যবোধ, হাজারো শহীদদের আকাঙ্ক্ষা, প্রিয় শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ যারা ফাঁসিতে ঝুলে শাহাদাতাদের পিয়ালা পান করলেন, যারা নতুন বাংলাদেশ দেখে যেতে পারেননি, তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ই হচ্ছে তাদের ঋণ পরিশোধের একমাত্র উপায়। আসুন আমরা এই তারবিয়াতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের মান সকল দিক দিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যাই এবং তৃণমূল সংগঠনকে মডেল সংগঠনে পরিণত করার সকল শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করি।
২৬ ও ২৭ জুন বৃহস্পতি ও জুমাবার দুই দিনব্যাপী মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত উপজেলা/থানা আমিরদের শিক্ষাশিবিরের দ্বিতীয় দিনের বক্তব্যে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এই সব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব আবদুর রব এর সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শিক্ষাশিবিরে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা পেশ করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মজলুম জননেতা জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম, জনাব সাইফুল আলম খান মিলন ও জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী ও ড. অধ্যাপক আবদুস সামাদ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আমাদের সংগঠনের একটা ভিশন হল জনমতকে ইসলামের অনুকূলে নিয়ে আসা। আর দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য লোক তৈরি করা। এই কাজের মাধ্যমে আমরা দ্বীনের বিজয় দেখব, মহান রব খুশি হবেন আর আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতবাসী করবেন ইনশাআল্লাহ। এটাই আমাদের ভিশন। এই লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ আজ আমাদের সামনে তৈরি হয়েছে। আসুন আমরা জনসেবার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যাই। মানুষকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করি। আল্লাহ যদি আমাদেরকে সরকার গঠনের সুযোগ দেন, তাহলে দেশ পরিচালনার যোগ্য লোক আমাদের রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি বলেন, এতবড় একটা পরিবর্তনের পর একটা নতুন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে পূরণ করতে হবে। এই স্বপ্ন পূরণে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি সুখী-সমৃদ্ধ এবং শান্তি-স্বস্তির মানবিক বাংলাদেশ গড়ি। একটা বৈষম্যহীন মানবমুক্তির রাষ্ট্রগঠন করি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আজ দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচার দৃশ্যমান করে আমাদেরকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, আমি সাংগঠনিক প্রোগ্রামে গিয়ে মাঝেমাঝে বলার চেষ্টা করি, জামায়াতের যে সাংগঠনিক কাঠামো, যে সিস্টেম এটা কিন্তু অন্য কোনো দলের ভিতরে নেই। আমাদের লোক তৈরি করার পদ্ধতি, দাওয়াতের পদ্ধতি, বাইতুলমাল মজবুত করার পদ্ধতি, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পদ্ধতি সবকিছুই আলাদা। সবকিছুই ভিন্ন। এর জন্য মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হয় আমাদের তৃণমূল সংগঠনকে। আপনি যতই মনে করুন যে, কেন্দ্রীয় সংগঠন, জেলা/মহানগরী সংগঠন তাদের বড় বড় সাইনবোর্ড আছে, হেডকোয়ার্টার আছে, আছে আরও কত কী? আমাদের কাছে মনে হয় এইগুলোই আসল সংগঠন। তবে কোনো আসলই আসল থাকে না, যদি সেখানে মজবুত সংগঠন না থাকে। পক্ষান্তরে যেখানে কর্মী তৈরি হয়, রুকন তৈরি হয়, যেখান থেকে মিছিলে লোক আসে, বাইতুলমাল আসে, ভোট পাওয়া যায় সেই সংগঠনই হল আসল বা মজবুত সংগঠন।
তিনি আরও বলেন, একটি মজবুত বা শক্তিশালী সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দু হলো ইউনিট। মানবদেহের সকল অঙ্গের মধ্যে হার্ট যেমন সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি একটি মজবুত সংগঠনের প্রাণ বা হৃদপিণ্ড হলো তৃণমূল অর্থাৎ ইউনিট সংগঠন। কারণ এখানেই কর্মী তৈরি, রুকন তৈরি হয়, এখান থেকেই মিছিলে লোক আসে, বায়তুলমাল আসে এবং ভোটও পাওয়া যায়। ইউনিট যখন যথাযথ ফাংশন করে, তার প্রভাব সারাদেশের সংগঠনের ওপর গিয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, জায়গা ভেদে ওয়ার্ডে তিন থেকে চার হাজার ভোট থাকে। এই ভোটগুলো সংগ্রহ করার দায়িত্ব ইউনিট বা ওয়ার্ড সংগঠনের। যে থানা বা উপজেলা সকল সূচকে আদর্শ বা অনুকরণীয় হয়, সব দিক দিয়ে ভাল থাকে সেটিই হচ্ছে আদর্শ থানা বা উপজেলা সংগঠন। একটি মডেল থানার সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকতে হয়। যেমন নিয়মিত বৈঠক, কর্মীগঠন, মানোন্নয়ন, বাইতুলমাল বৃদ্ধি, বই বিলি, জনশক্তির রিক্রুটমেন্ট, নিজেদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় থাকাসহ সবকিছু সংগঠনের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা। এই বৈশিষ্ট্যসমূহের অধিকারী সংগঠনই শতভাগ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম। এই বৈশিষ্ট্যসমূহ অর্জন করে আমরা যদি জামায়াতে ইসলামীর সকল সাংগঠনিক উপজেলা/থানা সংগঠনকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি তাহলেই আমরা জাতীয় নির্বাচনে যে কাঙ্খিত ফল আমরা আশা করি তা অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচন কোনো দলের নয়। এই নির্বাচন হল দেশি-বিদেশি চক্রান্তের বিরুদ্ধে, আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে; যারা এদেশ থেকে ইসলামী শক্তিকে নির্মূল করতে চায়, যারা দ্বীনের বিজয়কে রুখে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে।
আবির