
ছবি: সংগৃহীত
আজ ২৮ জুন, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন। ১৯৪০ সালের এই দিনে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ক্ষুদ্রঋণ ধারণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে যে বিপ্লব ঘটেছে, তার সূচনালগ্নে ছিলেন এই বাঙালি সন্তান। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আজও তাঁর উদ্ভাবিত মডেল অনুসরণ করে গরিব মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা চলছে।
চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি ভাবতে শুরু করেন—কেন গরিব মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ পায় না? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নেয় ক্ষুদ্রঋণের ধারণা। জামানত ছাড়াই দরিদ্র মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার কার্যক্রম শুরু করেন তিনি।
১৯৭৬ সালে ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম শুরু করেন, যা পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে সরকারিভাবে গ্রামীণ ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যাংক আজও লাখো দরিদ্র নারী ও পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করে আত্মমর্যাদার জীবনে ফিরিয়ে আনছে। তাঁর এই কর্মযজ্ঞের জন্য ২০০৬ সালে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গর্বের অধ্যায়।
ড. ইউনূস শুধু অর্থনীতিবিদ নন, সমাজ পরিবর্তনের এক দূরদর্শী চিন্তাবিদ। তিনি 'সোশ্যাল বিজনেস' বা সামাজিক ব্যবসার ধারণা দিয়ে দেখিয়েছেন—মুনাফা নয়, মানুষের কল্যাণই হতে পারে ব্যবসার লক্ষ্য। তাঁর প্রতিষ্ঠিত Yunus Centre এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে।
তবে তাঁর পথচলা সবসময় মসৃণ ছিল না। বিভিন্ন সময় সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ, গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ইস্যু, এবং সাম্প্রতিক সময়ে শ্রম আইন ও কর সংক্রান্ত কিছু মামলায় তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। তবুও, এসব বিতর্ক কখনও তাঁর অর্জনের গুরুত্বকে ম্লান করতে পারেনি। দেশ ও বিদেশে এখনও তিনি একজন সম্মানিত চিন্তাবিদ ও মানবকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ।
চলমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে দেশ একটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। একজন অরাজনৈতিক, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। জন্মদিন উপলক্ষে আজ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁকে ঘিরে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার আবহ তৈরি হয়েছে।
তাঁর জন্মদিনে জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে সেই মানুষটিকে, যিনি গরিবের পাশে দাঁড়ানোর সাহস করেছিলেন, যিনি ব্যাংকিং ব্যবস্থার দরজা খুলে দিয়েছিলেন সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য। তাঁর চিন্তা ও দর্শন আজও নতুন প্রজন্মের জন্য এক অনুকরণীয় পথ।
আসিফ