ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

ধলঘাটা: এক অবহেলিত জনপদের কান্না

ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ০২:০৪, ২৭ জুন ২০২৫

ধলঘাটা: এক অবহেলিত জনপদের কান্না

কখনো ভেবেছেন, বর্ষার পর একটা কাদামাটির রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাঁটতে হয়—স্কুলে যেতে, বাজারে যেতে, হাসপাতালে পৌঁছাতে? ধলঘাটা ইউনিয়নের মানুষদের কাছে এটি শুধুই কোনো কল্পনা নয়, এটি তাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। আপনি যে ছবিগুলো দেখছেন—এগুলো কোনো দুর্যোগ পরবর্তী চিত্র নয়, বরং এটি বছরের অধিকাংশ সময়ের অবস্থা।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি সরু কাদা-মাটি ঘেরা রাস্তা, যার দুপাশে থৈ থৈ পানি। এই পথ দিয়েই চলাচল করে স্কুলপড়ুয়া শিশু, বৃদ্ধ পিতা, অন্তঃসত্ত্বা নারী। পাশে বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি দেখা গেলেও, মানুষের জীবনে আলোর সঞ্চার হয়েছে কতটুকু? দুর্ভোগ আর নিরাপত্তাহীনতা তাদের নিত্যসঙ্গী।

একটি পাকা রাস্তার গর্তে বড় একটি কংক্রিট স্ল্যাব ভেঙে পড়ে আছে, নিচে কেবল ফাঁকা গহ্বর। একটু অসতর্ক হলেই সেখানে ঘটে যেতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। এই রাস্তাটি কেবল একটি সড়ক নয়, এটি এই অঞ্চলের জীবনরেখা।

কাদাময় রাস্তা এ যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ নয়, বরং উন্নয়ন পরিকল্পনার অভাবে মানুষের অসহায়তা। প্রতিদিনের পদচারণায় কাদা শুকায় না, বরং আরও ভারি হয়ে ওঠে দুর্ভোগের পালা।এই ধলঘাটা ইউনিয়নের মানুষগুলো বড় চুপচাপ। তাদের অভাব আছে, অভিযোগ নেই। তারা দিনশেষে শুধু একটু উন্নয়ন চায়, একটু নিরাপদ চলাচলের পথ চায়, একটু সম্মান চায়। এই চাওয়া কি এতটাই কঠিন?

সময় এসেছে, এই জনপদের কথা জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার। এই মানুষেরাও বাংলাদেশের নাগরিক, তারাও স্বপ্ন দেখে, তারাও উন্নত জীবনের যোগ্য।

ধলঘাটার কান্না শুনবে কে? – এক অবহেলিত জনপদের দীর্ঘশ্বাস

ধলঘাটা ইউনিয়ন—প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট এক জনপদ। খাল-বিল, সবুজ ফসলের মাঠ, পরিশ্রমী মানুষ—সবই আছে এখানে। কিন্তু নেই কেবল উন্নয়ন, নেই মানুষের ন্যায্য অধিকার। সরকার আসে, যায়। চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হয়, মেয়াদ শেষ করে। কিন্তু ধলঘাটা থেকে যায় সেই আগের জায়গায়—অবহেলায়, অনাদরে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ায়। কারও চোখে তখন ধলঘাটা হয় “নতুন স্বপ্নের জনপদ”। কারও চোখে এটা “উন্নয়নের মডেল” বানানোর অঙ্গীকার। কিন্তু ভোট শেষ হলে সব প্রতিশ্রুতি যেন গায়েব হয়ে যায়—একটি ছেঁড়া পোস্টারের মতো, যেটা বাতাসেই উড়ে যায়।

রাস্তা আছে, কিন্তু হাঁটার মতো না। স্কুল আছে, কিন্তু শিক্ষক নেই। হাসপাতাল আছে, কিন্তু সেবা নেই। এই হলো ধলঘাটার বাস্তবতা।

জনগণ দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছে। যারা একটু আশার আলো খোঁজে, তারা দেখে শুধুই রাজনৈতিক নাটক। আর সেই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো এখন আবার প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন নির্বাচনের জন্য! কী সাহস! কী নির্লজ্জতা!

আপনারা কী ভাবে মুখ দেখাবেন? কিসের ভিত্তিতে ভোট চাইবেন?

ধলঘাটা আজ প্রশ্ন করে—
উন্নয়নের যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেটা কোথায়?
দুর্ভোগে যারা দিন কাটাচ্ছে, তাদের খবর কি নিয়েছেন?
নির্বাচনের আগেই কেবল কেন আপনাদের দেখা মেলে?

ধলঘাটার মানুষ আর ঠকতে চায় না। তারা চায় স্বচ্ছ নেতৃত্ব, চায়না প্রতিশ্রুতি চায় বাস্তবায়ন। চায় এমন কাউকে, যে শুধু মাইক ধরেই কথা বলবে না, কথা রাখবেও।

ধলঘাটার কান্না থামাতে হলে, আগে সেই কান্না শুনুন। আর না শুনলে—ভবিষ্যতের ব্যালটের ঝড় আপনাদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে।

ধলঘাটা ইউনিয়ন—প্রকৃতির দান, কিন্তু রাষ্ট্রীয় অবহেলার শিকার। চারদিকে খাল-বিল, কৃষির সম্ভাবনা, কঠোর পরিশ্রমী মানুষ—তবুও নেই প্রকৃত উন্নয়ন। সরকার বদলেছে, স্থানীয় চেয়ারম্যান এসেছেন, গেছেন; কিন্তু ধলঘাটার ভাগ্য বদলায়নি।

আজও এখানে:
কাঁচা রাস্তা বর্ষায় পানির নিচে তলিয়ে যায়,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক বা উপকরণ,
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই ওষুধ বা চিকিৎসক।

এর মাঝেও কিছু লোক উন্নয়নের গল্প শোনাতে চায়। কী সেই উন্নয়ন?

কিছু চাল, ডাল, তেল আর ত্রাণের কার্ড!

হ্যাঁ, কয়েকজনকে ত্রাণের কার্ড দিয়েছে, কেউ কেউ পায় আবার কেউ চিরদিনই বঞ্চিত। এই কার্ডই এখন “উন্নয়নের নমুনা” হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে! যেন ভিক্ষে দিয়েই জনসেবা সম্পন্ন!

জনগণ কি তাই চেয়েছিল? ত্রাণ না, তারা চায় অধিকার। জনগণ ভিক্ষুক নয়, তারা ভোট দিয়ে আপনাকে তাদের প্রতিনিধি বানিয়েছে—খবরদার, তাদের মর্যাদায় আঘাত করবেন না।

এখন আবার ভোটের ঢোল বাজছে। পরিচিত মুখগুলো আবার ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছে। হাসছে, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, আর উন্নয়নের গল্প বলছে সেই একই ত্রাণের কার্ড দেখিয়ে!

ধলঘাটা আজ চুপ নেই—
তারা প্রশ্ন করে,
তারা হিসাব চায়,
তারা বিশ্বাসঘাতকের মুখে আর হাসি সহ্য করবে না।

উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ, নেতৃত্বের নামে নীরবতা!

এক সময় বলা হতো ধলঘাটা ইউনিয়ন পিছিয়ে আছে উন্নয়নের দিক থেকে। আজও তাই। কিন্তু এখন সেই পিছিয়ে পড়া জনগণের মাথার উপর ছায়াটুকুও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

সরকার নামমাত্র মূল্যে মানুষের বসত বাড়ি , পুরনো ভিটেমাটি কেড়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এই কি উন্নয়ন? না কি গরিবের চোখের জল দিয়ে পুঁজিপতিদের স্বপ্নপূরণ?

আর ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো—এই অন্যায়ের সময়েও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চুপ। যাদের দায়িত্ব ছিল এই ইউনিয়নের মানুষের অধিকার রক্ষা, তারা আজ যেন মেঘে ঢাকা চাঁদ। সমাজের যাঁরা নেতৃত্ব দেয়ার কথা, তারাও নিঃশব্দ। এটা কি কেবল অবহেলা? না, এটা প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাই নয়, এটা নৈতিক ব্যর্থতা।

আমরা জানতে চাই:
জনপ্রতিনিধিরা কোথায়?
সমাজপতিরা কী করছেন?
ধলঘাটা বুকে গভীর সমুদ্র বন্দর কিন্তুু তার নামটাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে, এই বৈষম্যর জন্যে দায়ী কারা ?

ধলঘাটা আজ এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে সরকারের লোভনীয় উন্নয়নের মুখোশ, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের চোখের জল। আর মাঝখানে—নেতৃত্বের নীরবতা!

এই নীরবতা যদি এখনই না ভাঙে, তবে জনগণই ভাঙবে নীরবতা, এমন কি আইন হাতে তুলে নিতে বিন্দু পরিমাণ পিছপা হবেনা। 

ধলঘাটার মানুষ আজ জানে—ত্রাণ নয়, উন্নয়ন চায়। উচ্ছেদ নয়, অধিকার চায়। নীরবতা নয়, নেতৃত্ব চায়।

প্রিয় ধলঘাটার প্রতিনিধি গন আসুন এখন অন্তত পক্ষে ধলঘাটার অস্তিত্ব রক্ষায় অগ্রনী ভুমিকা রাখুন। ধলঘাটা শান্তি প্রিয় জনগণ আপনার কথা মনে রাখবে।

 

বিঃদ্রঃ - প্রতিবেদককে মতামত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক, মোস্তফা মকুল, ধলঘাটা, মহেশখালী কক্সবাজার।

 

রাজু

×