ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইব্রাহিম ট্রাউরে

আফ্রিকার নতুন আশার আলো, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের আতঙ্ক

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৬ জুন ২০২৫

আফ্রিকার নতুন আশার আলো, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের আতঙ্ক

ছবি: সংগৃহীত

সাহারা মরুর দক্ষিণে অবস্থিত একটি দেশ—বুরকিনা ফাসো। আফ্রিকার রাজনৈতিক অস্থিরতায় বহুদিন ধরেই আলোচনায় থাকা এই দেশ হঠাৎ করেই উঠে এসেছে বিশ্বমঞ্চের কেন্দ্রবিন্দুতে। কারণ, এখানকার এক তরুণ সামরিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম ট্রাউরে এখন শুধু নিজের দেশের নেতা নন—বরং আফ্রিকান মুক্তিকামী তরুণদের কাছে এক সাহসী প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের চোখে তিনি ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্রোহী’, আর আফ্রিকার জনগণের চোখে তিনি ‘আশার আলো’।

ইব্রাহিম ট্রাউরে ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন সামরিক অফিসার। তবে ২০২২ সালের অক্টোবরে, মাত্র ৩৪ বছর বয়সে এক শান্তিপূর্ণ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি বুরকিনা ফাসোর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। সে সময়ের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট পল-হেনরি সানদাওগো দামিবা সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে পড়লে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উঠে আসেন ট্রাউরে।

তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধানদের একজন। তবে বয়স নয়, তার অবস্থানকে আলাদা করেছে তার স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান ও স্বপ্নের পরিসর।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাউরে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থানের মাধ্যমে। তিনি বলছেন, "আমরা আর কারও উপনিবেশ হতে চাই না। আমাদের সম্পদ, আমাদের জনগণ এবং আমাদের ভবিষ্যৎ—সবকিছুর উপর অধিকার থাকবে আমাদেরই।"

তিনি ফ্রান্সের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করেন, পশ্চিমা সহায়তার নামে আরোপিত শর্ত প্রত্যাখ্যান করেন এবং বুরকিনা ফাসোকে একটি সত্যিকারের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করেন।

বুরকিনা ফাসোর মতো একটি তুলনামূলক দরিদ্র ও সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে জর্জরিত দেশের নেতা হয়েও ট্রাউরে আজ আফ্রিকাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি নিয়মিতই সামরিক পোশাকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান, ফ্রন্টলাইনে কাজ করেন, এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেন।

গিনির মামাদি ডুম্বুয়া, মালির আসিমি গোইটা ও নাইজারের আবদুররহমান তিয়ানি—এই তিন সামরিক নেতার সঙ্গে একত্রিত হয়ে ট্রাউরে গঠন করেছেন নতুন এক আঞ্চলিক জোট, যা আফ্রিকান সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ট্রাউরের দৃঢ় অবস্থান পশ্চিমা বিশ্বের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্স বুরকিনা ফাসোতে বহু দশক ধরে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বজায় রেখেছিল। কিন্তু ট্রাউরের নেতৃত্বে সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটি এখন রাশিয়া ও অন্যান্য বিকল্প শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাঁটছে।

তবে ট্রাউরের পথ পুরোপুরি সুগম নয়। মানবাধিকার সংস্থা ও কিছু পশ্চিমা মিডিয়া তার সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা এবং সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তুলেছে। যদিও স্থানীয় জনগণের বড় অংশ বলছে, বর্তমানে তাদের প্রয়োজন ‘নিরাপত্তা ও মর্যাদা’, ‘ভোটের নাটক’ নয়।

ইব্রাহিম ট্রাউরে এখন শুধুই বুরকিনা ফাসোর নেতা নন, বরং আফ্রিকার ‘নতুন আফজাল খাঁ’, ‘আধুনিক সেকু তুরে’ বা ‘তরুণ থমাস সাংকারা’ হয়ে উঠছেন ধীরে ধীরে। পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত এক সার্বভৌম আফ্রিকার স্বপ্ন তার চোখে স্পষ্ট। প্রশ্ন একটাই—আফ্রিকা কি এবার সত্যিই জেগে উঠবে? আর ইব্রাহিম ট্রাউরে কি সেই জাগরণের নায়ক হবেন?

ফারুক

×