ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যবহার হচ্ছে শুধু ধান শুকাতে

১১ বছরেও মেলেনি সেতুর সুফল

জামাল বাদশা, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ২২:০১, ২৬ জুন ২০২৫

১১ বছরেও মেলেনি সেতুর সুফল

সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত কোনো সড়ক না থাকায় জনগণের ভোগান্তি

দুই পাশে ঘরবাড়ি, মাঝখানে ৩৩ মিটার দীর্ঘ একটি কংক্রিটের সেতু। কিন্তু নেই কোনো রাস্তা। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলেও ১১ বছর ধরে সেতুটি অব্যবস্থাপনার মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত কোনো সড়ক না থাকায় এটি এখন কৃষকের ধান শুকানোর জায়গা। সুফলের বদলে এলাকাবাসীর জন্য সেতুটি হয়ে উঠেছে হতাশা আর ক্ষোভের কারণ।
২০১৪ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের হিরামানিক এলাকার কুড়ারপাড় বিলে সেতুটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। কিন্তু সেতুর দুই পাশে সরকারি জমি না থাকায় কোনো অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি হয়নি। ফলে নির্মাণের ১১ বছর পার হলেও সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, কোনো মানুষও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। কেবল পায়ে হেঁটে চলাফেরা সম্ভব হলেও সেটাও সীমিত।
স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রশিদ বলেন, এই সেতুর কারণে লাভ তো দূরের কথা, এখন উল্টো ভোগান্তি বাড়ছে। কেউ অসুস্থ হলে বয়ে বয়ে তাকে সেতু পার করে ওপারে গাড়িতে তুলতে হয়। রাস্তা না থাকায় কোনো ভ্যান বা মোটরসাইকেল চলতে পারে না। সেতুটা আমাদের গলার কাঁটা হয়ে গেছে। স্থানীয় ভ্যানচালক আবুল কাশেম বলেন, সেতুর পাশে আমি রিকশাভ্যান চালাই। কিন্তু কোনোদিনও এই সেতু দিয়ে পার হতে পারি নাই। ফাঁকা জায়গায় সেতু বানানো দেখে মানুষ হাসাহাসি করে। কোটি টাকা খরচ করে সরকারের কোনো উপকার তো হয় নাই, উল্টো গ্রামের মানুষ কষ্টে আছে।
একই গ্রামের হযরত আলী বলেন, প্রথমে যখন সেতু বানায়, তখন আমরা ভেবেছিলাম যাতায়াতের কষ্ট দূর হবে। কিন্তু দুই পাশে রাস্তা না করায় সেটা এখন ধান শুকানোর জায়গা হয়ে গেছে। আমাদের জমি অধিগ্রহণ করে হলেও দ্রুত রাস্তা তৈরি করা দরকার।
স্থানীয় দোকানদার আবু তালেব বলেন, এই সেতু দিয়ে কেউ বাজারে মালামাল আনতে পারে না। রাস্তা নেই, গাড়ি চলে না। এতে ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে। অনেক সময় কৃষকেরা ফসল নিয়ে সেতুর ধারে বসে থাকে। কেউ পার করে দিলে তবে বাজারে আনতে পারে। এই সেতু এখন জনদুর্ভোগের আরেক নাম।
সেতুটি ঘিরে এলাকায় বিরাজ করছে চরম হতাশা ও ক্ষোভ। বছরের পর বছর দুই পাশে কোনো গ্রামীণ সড়ক না থাকায় সরকারের কোটি টাকার এই অবকাঠামো এখন পুরোপুরি অকার্যকর। এলাকাবাসীর দাবি—আর পরিকল্পনা নয়, দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করে সেতুর সঙ্গে রাস্তার সংযোগ তৈরি করতে হবে। নাহলে সরকারের এই বড় ব্যয় শুধু ধান শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হবে আর মানুষের দুর্ভোগ থেকেই যাবে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার আলম বলেন, সেতুতে ওঠার জন্য দুই পাশে রাস্তা সরু ও কাঁচা। এতে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। আমরা সেতুর দুই পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বাজেট এলেই কাজ শুরু হবে।

প্যানেল

×