ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

কল্যাণ ভাতা তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ, ইউএনওর মাধ্যমে তদন্তের দাবি

রিপন ইসলাম শেখ, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২৬ জুন ২০২৫

কল্যাণ ভাতা তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ, ইউএনওর মাধ্যমে তদন্তের দাবি

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

নীলফামারীর ডোমারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাসিক কল্যাণ ভাতার তালিকায় প্রকৃত অসচ্ছল শিল্পীদের বাদ দিয়ে শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সচ্ছল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা। বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৮ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে ২৪ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শায়লা সাঈদ তন্বীর মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ডোমার উপজেলার একাধিক সংস্কৃতিসেবী।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, “প্রতি বছর তালিকা প্রস্তুত করা হলেও এবার সেখানে এমন ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যারা সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।”

২৫ নম্বর ক্রমিকের মো. জাকির হোসেন একজন ব্যবসায়ী; তার স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তাদের আবাদি জমি রয়েছে। ২৮ নম্বরের আমিনুর রহমানের স্ত্রী ও সন্তান সরকারি চাকুরিজীবী; তার নিজেরও জমিজমা রয়েছে। ৩১ নম্বরের রনজিৎ কুমার কর্মকার এবং তার স্ত্রী দুজনই এমপিওভুক্ত শিক্ষক; তাদের নামে মার্কেটও আছে। ৩২ নম্বরের মো. আব্দুল মালেক (মুকুল) একটি ওষুধ কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার; তার স্ত্রীর নামে ডোমার বাজারে মার্কেট ও পাকা বাড়ি রয়েছে।

অথচ এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বহু বর্ষীয়ান সংস্কৃতিকর্মী। ৭৮ বছর বয়সী সংগীতশিল্পী শ্রী চিনি রাম অধিকারী বলেন, “৩০ বছরের বেশি সময় ধরে গান গেয়ে আসছি, প্রতি বছর আবেদন করি, কিন্তু আজও নাম ওঠেনি।”

স্থানীয় শিল্পীরা জানান, “অনেকে বছরের পর বছর ধরে নাটক, গান, আবৃত্তি ও নৃত্যচর্চা করে আসছেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হয়েও থেমে যাননি। অথচ এবারও তারা উপেক্ষিত। সরকারি ভাতা আমাদের জন্য আশার আলো হলেও এখন তা বিত্তবানদের হাতে চলে যাচ্ছে।”

ডোমার নাট্য সমিতির আহ্বায়ক মাসুদ বিন আমিন সুমন বলেন, “তালিকায় এমন ব্যক্তিদের নাম রয়েছে যারা কখনো মঞ্চে অংশও নেননি। এটি ডোমারের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। আমরা জোর দাবি জানাই—নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত সংস্কৃতিকর্মীদের এই ভাতার আওতায় আনতে হবে।”

এ বিষয়ে ইউএনও শায়লা সাঈদ তন্বী জানান, “আমার মাধ্যমে একটি লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত ছাড়া কারা ভাতা পাওয়ার অযোগ্য, তা বলা যাচ্ছে না। ডিসি স্যারের নির্দেশনা পেলে তদন্ত করা হবে।”

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে নীলফামারী জেলার ৩৪ জনের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ডোমারের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের অনেকের সচ্ছলতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। তারা এই তালিকা পুনঃপরীক্ষা করে প্রকৃত অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবীদের ভাতার আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।

মিরাজ খান

×