ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বন্দরে কন্টেইনার জটের শঙ্কা

কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে স্থবিরতা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২৬ জুন ২০২৫

কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে স্থবিরতা

.

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে চলছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলতে থাকা এ কর্মসূচির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের একক বৃহত্তম রাজস্ব যোগানদাতা সংস্থা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শুল্কায়ন কার্যক্রম। এর প্রভাব পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে। ফলে ইয়ার্ডে ফের পণ্যজটের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কাস্টমসে কর্মসূচি চলমান থাকায় আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কমেছে রপ্তানি পণ্যের জাহাজীকরণও।  
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রথমদফা আন্দোলন শুরু হয়েছিল মে মাসে। সমাধানের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মে সে কর্মসূচি স্থগিত হয়। কিন্তু চূড়ান্ত সুরাহা না হওয়ায় আবারও কর্মসূচিতে রাজস্ব কর্মকর্তা কর্মচারীরা। দেশের প্রতিটি কাস্টম হাউসে চলছে এ কর্মসূচি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে স্থবিরতা নেমে আসায়। কারণ, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯০ ভাগই সম্পন্ন হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে, যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই কাস্টম হাউস।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের চিত্র ছিল অনেকটাই সুনসান। শুল্ক ভবনে দেখা যায়নি ফাইলপত্র নিয়ে ব্যস্ততা, নেই সিএন্ডএফ এজেন্টস প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদেও ছোটাছুটি। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় দীর্ঘ লাইনও নেই স্বাভাবিক কর্মদিবসের মতো। কারণ, এসব কাজ পুরোপুরিই শুল্কায়নের ওপর নির্ভর করে। শুল্কায়ন নেই তো ব্যস্ততাও নেই। এর ফলে রাজস্ব আদায় যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনিভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা।
এ দিকে, আন্দোলনকারী সংগঠন এনবিআর সংস্থার ঐক্য পরিষদের কাছ থেকে যে তথ্য মিলেছে তাতে অচলাবস্থা অতি দ্রুত সমাধানের কোনো আভাস নেই। আন্দোলনকারীরা আলোচনার শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি। ফলে এ স্থবিরতা কবে কাটবে, তা নিয়ে রয়ে গেছে অনিশ্চয়তা।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দেশের অর্থনীতিতে একক বৃহত্তম রাজস্ব যোগানদাতা সংস্থা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ শুল্ক ভবন রাজস্ব আদায় করেছে ৬৮ হাজার ৫৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬২ হাজার ৬৫৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার রাজস্ব। দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ও প্রতি বছরই বাড়ছে।  
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট এসোসিয়েসনের অন্যতম শীর্ষ নেতা কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু জনকণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবারও বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি হয়েছে। সাধারণত দিবসের এই সময়টুকুতেু ব্যস্ততা খুবই বেশি থাকে। কর্মবিরতি থাকায় আমদানি রপ্তানি সংক্রান্ত ডকুমেন্ট দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। শুল্কায়ন কাজ এক প্রকার বন্ধ হয়ে আছে। তিনি জানান, সকাল থেকে ১২টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় প্রচুর চাপ পড়ছে। অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কুরিয়ার সার্ভিসে ডকুমেন্ট পাঠিয়ে থাকে, যেগুলো হাতে এসে পৌঁছতে ১২টা এমনকি বিকেল গড়িয়ে যায়। সেগুলো আর দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পরিবহন বিভাগ জানাচ্ছে, শুল্কায়ন স্বাভাবিক গতিতে না হওয়ার প্রভাব পড়েছে বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারিতে। কারণ, যে পণ্যগুলো বের হয় সেগুলোর শুল্কায়নের দায়িত্বটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। রাজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেহেতু কর্মবিরতিতে রয়েছেন সেহেতু শুল্কায়নও থমকে আছে। এতে বন্দরে কন্টেইনার জটের শঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার স্তূপ বড় হয়েছে। কারণ, এ সময়ের মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য ডেলিভারি না নিলেও জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামা থেমে থাকে না। শুধুমাত্র দুই ঈদের দিন সকালের শিফট ছাড়া সারাবছর ২৪ ঘণ্টা চলে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। ছুটি শেষ হওয়ার পর কন্টেইনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখন ফের পড়েছে অনিশ্চয়তায়।  
কাস্টমসে কর্মবিরতির ফলে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কেননা, এই শিল্প খাতটি যেমন শতভাগ রপ্তানিমুখী, তেমনিভাবে প্রায় শতভাগ আমদানি নির্ভরও। কেননা, শিল্পের কাঁচামালগুলো আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে।

প্যানেল

×