ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

যকৃতের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব খাবারের অভ্যাস

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৬ জুন ২০২৫

যকৃতের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব খাবারের অভ্যাস

ছবি:সংগৃহীত

যকৃতের ক্যানসার একটি সাধারণ এবং গুরুতর সমস্যা। ২০২২ সালের Globocan–এর তথ্য বলছে, এই রোগটি আক্রান্ত এবং মৃত্যুর দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। হানোইয়ের তাম আ্যন জেনারেল হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. লু থাও নগক জানাচ্ছেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চারটি সাধারণ খাদ্যাভ্যাস এই ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

চলুন এক নজরে দেখে নিই কী কী অভ্যাস যকৃতের জন্য ভয়ংকর হতে পারে:

১. পচা বা ছাঁচ ধরা খাবার খাওয়া
বাদাম, চিনাবাদাম, ভুট্টা, চাল বা ডালের মতো শস্যজাত খাবার যদি ভালোভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তাহলে সেগুলোতে অ্যাফ্লাটক্সিন নামক একধরনের বিষাক্ত ছাঁচ জন্মাতে পারে। অ্যাফ্লাটক্সিন যকৃতের কোষে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং ক্যানসারের কারণ হতে পারে। খারাপ খবর হলো, সাধারণ রান্নার তাপমাত্রায় এই বিষ নষ্ট হয় না।

ডা. নগক বলছেন, “মাটি বা ঘামের গন্ধযুক্ত বা রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া শস্যজাত খাবার কখনোই খাওয়া উচিত না।” এগুলো বরং শুষ্ক, ঠাণ্ডা স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত।

২. নিয়মিত মদ্যপান
অতিরিক্ত মদ্যপান যকৃতের জন্য ধ্বংসাত্মক। এটি ফ্যাটি লিভার, অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, এবং শেষপর্যন্ত সিরোসিস বা যকৃতের কঠিন জটিলতার কারণ হয়। মদ পচন প্রক্রিয়ায় অ্যাসিট্যালডিহাইড নামের এক বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়, যা যকৃতের ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যানসার হওয়ার পথ তৈরি করে।

বিশেষ করে যাদের হেপাটাইটিস বি বা সি আছে, কিংবা আগে থেকেই যকৃতজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি বিপজ্জনক। তাই সাবধান হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৩. একই তেল বারবার ব্যবহার করা
একই তেল বারবার গরম করলে তাতে অ্যাক্রোলিন, পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনস (PAHs) এবং অ্যালডিহাইডস তৈরি হয়—এগুলো যকৃতের কোষে পরিবর্তন এনে ক্যানসার ডেকে আনতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, রান্নার তেল দুইবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত না। তেলভাজা খাবারের পরিমাণও সীমিত করা ভালো। বরং গ্রিল, সেদ্ধ বা ভাপ দেওয়া খাবার বেছে নেওয়াই বেশি স্বাস্থ্যকর।

৪. ওষুধ ও সাপ্লিমেন্টের অপব্যবহার
নিজে থেকে বা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যথার ওষুধ, জ্বরের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, হারবাল প্রোডাক্ট বা নানা ধরনের ‘উপকারি’ সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যকৃতের জন্য ভয়ানক হতে পারে।

এসবের কারণে ড্রাগ-ইনডিউসড হেপাটাইটিস, যকৃত বিকল হয়ে যাওয়া কিংবা দ্রুত ক্যানসারের দিকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই যেকোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া একদমই ঠিক নয়।

কী করবেন?
ডা. নগক পরামর্শ দেন—হেপাটাইটিস বি’র টিকা অবশ্যই নিয়ে রাখা উচিত। যাদের যকৃতের সমস্যা রয়েছে বা পরিবারে কারও যকৃতের ক্যানসার ছিল, তাদের প্রতি বছর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। কারণ যকৃতের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না; যখন ধরা পড়ে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

সতর্ক থাকুন, যকৃত বাঁচান। আপনার সামান্য সচেতনতাই হতে পারে দীর্ঘ জীবনের হাতিয়ার।

মারিয়া

×