ছবি:সংগৃহীত
প্রশ্ন: "আমি প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ কফি খাই। নিয়মিত কফি খাওয়ার অভ্যাস কি যকৃতের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে?"
— মিনহ নক, হা নাম
উত্তর: হ্যাঁ, প্রতিদিন অন্তত এক কাপ কফি পান করলে দীর্ঘমেয়াদি যকৃতজনিত রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে তিন থেকে চার কাপ পর্যন্ত কফি খেলে এই উপকারিতা আরও বাড়ে।
কফিতে থাকা ক্যাফেইন ও পলিফেনলস (যা এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চ (AICR) যুক্তরাজ্যের প্রায় ৫ লাখ অংশগ্রহণকারীর ওপর ১০ বছর ধরে একটি গবেষণা চালায়। এতে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কফি পান করেন, তাদের মধ্যে—
- দীর্ঘমেয়াদি যকৃত রোগের ঝুঁকি ২১% কম
- ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি ২০% কম
- এবং যকৃত-সম্পর্কিত জটিলতায় মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৯% কম—তুলনায়, যারা কফি খান না তাদের চেয়ে।
তবে কফির উপকার পেতে হলে চিনি, কৃত্রিম মিষ্টি কিংবা ফ্লেভার এড়িয়ে চলা উচিত। বিশুদ্ধ ব্ল্যাক কফি সবচেয়ে ভালো।
তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে কিছু ক্ষেত্রে—
যাদের কিডনি সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্তে চিনি বা কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদের জন্য কফির পরিমাণ সীমিত রাখাই ভালো।
মধ্যবয়সী ও প্রবীণ ব্যক্তি, এবং যাদের হৃদরোগ, অ্যাসিড রিফ্লাক্স কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও কফির অতিরিক্ত সেবন এড়িয়ে চলা উচিত।
শুধু কফি নয়—সার্বিক জীবনধারা গুরুত্বপূর্ণ
যদিও কফি স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক, তবু ক্যানসার প্রতিরোধে আরও কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ:
- পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া
- মানসিক চাপ কমানো
- নিয়মিত ঘুম
- এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো
- বিশেষ করে যারা হেপাটাইটিস বি বা সি-তে আক্রান্ত, তাদের নিয়মিত লিভার স্ক্রিনিং করানো উচিত।
লিভার ক্যানসারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ:
- দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
- খিদে না পাওয়া
- অজানা ওজন হ্রাস
- পেটের উপরের ডান পাশে ভোঁতা ব্যথা
- চোখ ও ত্বক হলুদ হওয়া (জন্ডিস)
- অল্প জ্বর বা শরীরে অস্বস্তি
এই উপসর্গগুলো অনেক সময় হেপাটাইটিস বা সিরোসিসের সঙ্গে মিলে যায়, ফলে রোগ ধরা পড়ে দেরিতে, যখন চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য পরামর্শ:
নিয়মিত লিভার চেকআপ জরুরি, যদি আপনি—
- হেপাটাইটিস বি/সি ভাইরাসে আক্রান্ত হন
- নিয়মিত মদ্যপান করেন
- পরিবারে লিভার ক্যানসারের ইতিহাস থাকে
- ফ্যাটি লিভারে ভুগেন
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা থাকে
- ধূমপায়ী হন
চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে লিভার আলট্রাসোনোগ্রাফি, AFP টেস্ট (আলফা ফিটোপ্রোটিন) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরামর্শ দেন, যাতে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা সহজ হয়।
প্রতিদিন কফি খাওয়া, বিশেষ করে তিন থেকে চার কাপ পর্যন্ত, যকৃতের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর হতে পারে। তবে কেবল কফির উপর নির্ভর না করে, জীবনযাত্রার প্রতিটি দিক—খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, মানসিক স্বাস্থ্য ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার দিকেও নজর দিতে হবে।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।
মারিয়া
