
গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপ হঠাৎ করেই নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন গ্রুপ অ্যাডমিন ও সদস্যরা। যারা বছরের পর বছর ধরে সময়, শ্রম আর ভালোবাসা দিয়ে একটি কমিউনিটি তৈরি করেছিলেন, সেই গ্রুপগুলো হঠাৎ করে আর এক্সেসযোগ্য না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয় বিস্ময় ও ক্ষোভ। তবে অবশেষে মেটা জানাল, এটি ছিল একটি প্রযুক্তিগত ভুল। এখন সেই ত্রুটি ঠিক করে ধাপে ধাপে গ্রুপগুলো আবার সচল করা হচ্ছে।
টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব গ্রুপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই নিয়ম ভঙ্গের মতো গুরুতর কোনো অভিযোগের মুখে পড়েনি। বরং এসব গ্রুপ ছিল অনেকটাই নিরীহ ও সহায়ক—যেমন সাশ্রয়ের টিপস, শিশু পালন, পোষা প্রাণীর যত্ন, গেমিং, পোকেমনপ্রেমীদের আলোচনা কিংবা কীবোর্ড নিয়ে আগ্রহীদের কমিউনিটি। অনেকে হয়তো ভাববেন, এসব তেমন কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এমন কিছু গ্রুপে সদস্য সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তা মিলিয়নেও পৌঁছেছে।
মেটার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি মূলত একটি ‘টেকনিক্যাল গ্লিচ’ বা সফটওয়্যারের ভুল সিদ্ধান্ত। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা কিছু ফেসবুক গ্রুপে প্রভাব ফেলেছে এমন একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির বিষয়ে অবগত ছিলাম। এখন এটি সমাধান হয়েছে।”
এই ঘোষণার পর কিছু গ্রুপ অ্যাডমিন জানিয়েছেন, তাদের গ্রুপ ফের সচল হয়েছে কিংবা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস they've পেয়েছেন।
তবে এই ঘটনাটি ঘিরে আরও বড় একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে: প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যখন ধীরে ধীরে মানুষের জায়গায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (AI) বসিয়ে দিচ্ছে, তখন ভুলের দায় কাকে দেওয়া হবে? মানুষ অন্তত ব্যাখ্যা দিতে পারে, কিন্তু যখন সিদ্ধান্ত আসে এক নিঃশব্দ সফটওয়্যার থেকে, তখন ক্ষতিগ্রস্তরা কোথায় যাবেন?
অনেকে বলছেন, মেটার এই আচরণ নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে তারা কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে কমিউনিটি পরিচালনা—সব ক্ষেত্রেই মানুষের পরিবর্তে এআই নির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই মধ্যম স্তরের অনেক ইঞ্জিনিয়ারকে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপন করবে।
এই প্রেক্ষাপটে অনেক ফেসবুক গ্রুপ অ্যাডমিন উদ্বিগ্ন। তারা ভাবছেন, আজ যদি এই ভুল হয়, কাল আরও বড় ভুল কি অপেক্ষা করছে না? তারা চান স্বচ্ছতা, উত্তরদায়িত্ব এবং এমন একটি নীতিমালা, যেখানে মানুষের কণ্ঠস্বর প্রযুক্তির চেয়েও গুরুত্ব পাবে।
মেটা এখনো এই ত্রুটির জন্য সরাসরি এআইকে দায়ী করেনি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি তাদের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ‘বড় হয়ে ওঠার সময়কার সমস্যা’র আরেকটি উদাহরণ। প্রযুক্তি যতই অগ্রসর হোক না কেন, মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার বিকল্প হয়তো এখনও তৈরি হয়নি।
এই ঘটনা থেকে বড় শিক্ষা হতে পারে—কমিউনিটি মানেই শুধু সফটওয়্যারে গড়া নয়, এটা মানুষের আবেগ, বিশ্বাস আর সম্পর্কের জায়গা। সেই জায়গায় ভুল হলে শুধরে নেওয়া জরুরি, আর সময় থাকতে সেই ভুলের দায় স্বীকার করাটাই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাপ্য দায়িত্ব।
আফরোজা