
বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নিয়ে ব্যবহারকারীদের উদ্বেগও দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে কোন এআই প্ল্যাটফর্ম আপনার ডেটা সবচেয়ে নিরাপদ রাখে সেই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান মিস্ত্রাল এআই-এর তৈরি ‘Le Chat’ বা ‘লে শা’ মডেলকে সবচেয়ে ডেটা-সুরক্ষাবান্ধব এআই চ্যাটবট হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইনকগনি নামের একটি তথ্য সুরক্ষা প্রতিষ্ঠান। তারা ১১টি নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে জনপ্রিয় বড় ভাষাভিত্তিক এআই মডেলগুলো বিশ্লেষণ করে এই র্যাংকিং তৈরি করেছে।
গবেষণায় যেসব এআই প্ল্যাটফর্মকে বিশ্লেষণ করা হয়, তার মধ্যে ছিল ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি, মেটা এআই, গুগলের জেমিনাই, মাইক্রোসফটের কোপাইলট, ইলন মাস্কের xAI-এর গ্রোক, অ্যানথ্রপিকের ক্লড, ইনফ্লেকশন এআই-এর পি এআই এবং চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক।
প্রতিটি প্ল্যাটফর্মকে ০ থেকে ১ স্কোরে মূল্যায়ন করা হয়। যেখানে ০ মানে সর্বোচ্চ তথ্য-সুরক্ষা এবং ১ মানে সর্বনিম্ন। এই স্কোর নির্ধারণ করা হয়েছে মডেলগুলো কীভাবে ট্রেনিং হয়, কতটা স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয় এবং ব্যবহারকারীর তথ্য কীভাবে সংগ্রহ ও তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে ভাগ করা হয়—এসব দিক বিবেচনায়।
গবেষণায় দেখা যায়, মিস্ত্রাল এআই-এর ‘লে শা’ মডেল ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণে সবচেয়ে সতর্ক ও সীমিত মাত্রায় তথ্য সংগ্রহ করে। এআই-ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট গোপনীয়তার মানদণ্ডে এই মডেল উৎকৃষ্ট হিসেবে বিবেচিত হয়।
‘লে শা’ এবং ‘পি এআই’ এই দুটি প্ল্যাটফর্মই ব্যবহারকারীর দেওয়া প্রম্পট (লেখা বা ইনপুট) শুধুমাত্র নিজস্ব সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গেই ভাগ করে, তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে নয়।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের জানিয়ে দেয় কোন তথ্য কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এমন স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট প্রাইভেসি পলিসি থাকার কারণে এটি উচ্চ নম্বর পেয়েছে। যদিও গবেষকরা ব্যবহারকারীর তথ্য কীভাবে মডেল ট্রেনিংয়ে ব্যবহৃত হয় এবং তা প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে কীভাবে মিশে যায় তা নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইলন মাস্ক পরিচালিত xAI-এর গ্রোক। এটি তুলনামূলক বেশি পরিমাণে তথ্য সংগ্রহ করে এবং স্বচ্ছতা নিয়েও কিছু প্রশ্ন রয়েছে। অ্যানথ্রপিকের ক্লড মডেলের অবস্থান কাছাকাছি হলেও গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যবহারকারীর তথ্যের সঙ্গে মডেল কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, সে বিষয়টি এখানে আরও বেশি উদ্বেগের জায়গা তৈরি করেছে।
সবচেয়ে নিচে রয়েছে মেটা এআই। গবেষণায় এটিকে সবচেয়ে তথ্য-অনধিকারী ও গোপনীয়তাবিরোধী মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর রয়েছে গুগলের জেমিনাই এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলট।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যেসব প্ল্যাটফর্ম র্যাংকিংয়ের নিচের দিকে অবস্থান করছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহারকারীদের নিজেদের ইনপুট বা প্রম্পট মডেল ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত না হওয়ার বিকল্প সুবিধা (opt-out) দেয় না।
এই গবেষণা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, ব্যবহারকারীর তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অধিকার যেন না হারায়। বিশেষ করে এআই-এর ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্যে, স্বচ্ছতা ও তথ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন সময়ের চ্যালেঞ্জ।
ব্যবহারকারীরা যদি ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান, তবে কোন প্ল্যাটফর্মে তারা ভরসা করছেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এমন গবেষণাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সূত্র:https://tinyurl.com/36xpb2xs
আফরোজা