
ছবিঃ সংগৃহীত
গুগলের নতুন ভিডিও তৈরি প্রযুক্তি Veo 3 বাজারে আসার পর বিশ্বজুড়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ভয় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই এআই টুলটি এতটাই সহজে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে যে সাধারণ দর্শকের পক্ষে সেগুলো আসল না নকল বোঝা কঠিন।
সম্প্রতি ইরানের তেহরান ও ইসরায়েলের তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। এর পাশাপাশি ডিজিটাল পরিসরে ছড়িয়ে পড়ছে এমন সব ভিডিও, যেগুলো বাস্তব নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দিয়ে তৈরি।
অনলাইন যাচাইকরণ প্ল্যাটফর্ম GeoConfirmed জানায়, ইরান ও ইসরায়েলে বিমান হামলার ভুয়া ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে, যেগুলোর কোনোটিই বাস্তবে ঘটেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে সম্প্রতি অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়া প্রতিবাদের সময়েও AI-নির্মিত ভুয়া ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে।
এই পরিস্থিতিতে গুগলের এআই রিসার্চ শাখা DeepMind গত মাসে Veo 3 নামের একটি শক্তিশালী ভিডিও জেনারেশন টুল উন্মোচন করে। মাত্র টেক্সট কমান্ড থেকে আট সেকেন্ডের ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম এই টুল দিয়ে অত্যন্ত নিখুঁত এবং বাস্তবধর্মী ভিডিও ও শব্দতরঙ্গ তৈরি করা যায়, যা মানুষের পক্ষে আসল ভিডিও থেকে আলাদা করা কঠিন।
আল জাজিরা পরীক্ষামূলকভাবে একটি ভিডিও তৈরি করে যেখানে নিউইয়র্কে এক বিক্ষোভকারীকে দেখা যায়, যে দাবি করছে তাকে অর্থের বিনিময়ে প্রতিবাদে অংশ নিতে বলা হয়েছে—যা যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের একটি পরিচিত বক্তব্য।
সেই ভিডিওতে সহিংস অস্থিরতার দৃশ্যও যোগ করা হয়, এবং তা বাস্তব ভিডিওর মতোই মনে হয়।
আল জাজিরা আরও জানায়, তারা "তেল আবিবে বোমাবর্ষণ দেখাও" এবং একই রকম একটি কমান্ড "তেহরানে" প্রয়োগ করে ভুয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও বানাতে সক্ষম হয়েছে। যদিও Veo 3-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়, এটি ক্ষতিকর কমান্ড ব্লক করে, বাস্তবে তা প্রয়োগে কোনো সমস্যাই হয়নি।
Reality Defender নামের একটি ডিপফেইক সনাক্তকরণ প্রতিষ্ঠানের সিইও বেন কোলম্যান বলেন:
“আমি সম্প্রতি নিজের একটি ছবি ও কয়েক ডলারের সফটওয়্যার দিয়ে সম্পূর্ণ কৃত্রিম ভিডিও বানিয়েছি, যেখানে আমি ওয়েব সামিটে বক্তব্য রাখছি। সেটি আমার নিজের টিম, সহকর্মী এমনকি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদেরও বিভ্রান্ত করেছে।”
তিনি আরও বলেন,
“যদি আমি কয়েক মিনিটে এটা বানাতে পারি, তাহলে যেসব দুর্বৃত্তরা বিশাল সময় ও রিসোর্স নিয়ে কাজ করছে তারা কী করছে, ভাবাই যায় না। এটা ভবিষ্যতের হুমকি নয়—আমরা ইতোমধ্যে এক ভয়ঙ্কর দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছি।”
তবে গুগল বলেছে, তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।
এক মুখপাত্র বলেন:
“আমরা দায়িত্বশীলভাবে এআই উন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুগল এআই দিয়ে তৈরি প্রতিটি কনটেন্টে SynthID ওয়াটারমার্ক এবং Veo ভিডিওতেও দৃশ্যমান ওয়াটারমার্ক যুক্ত করা হয়, যাতে ব্যবহারকারীরা ভিডিওটির উৎস বুঝতে পারেন।”
উপসংহার
Veo 3-এর মতো প্রযুক্তি যেখানে সৃষ্টিশীল কাজে নতুন মাত্রা যোগ করছে, সেখানে একইসঙ্গে এটি ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর এক নতুন ঝুঁকিও সৃষ্টি করছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে সময়োপযোগী নীতিমালা ও অধিকতর সচেতনতা এখন সময়ের দাবি।
সূত্রঃ আল জাজিরা
ইমরান