
ছবিঃ সংগৃহীত
বুধবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ৪টার দিকে পাটগ্রাম উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক উমর ফারুক ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষপানের পর লাইভে চিৎকার করতে থাকলে তার স্ত্রী ও আশপাশের লোকজন টের পেয়ে দ্রুত পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জরুরি রংপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত উমর ফারুকের জ্ঞান না ফিরলেও তিনি বিপদমুক্ত বলে জানা যায়। এ ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয় লোকজনের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উমর ফারুকের পরিবারের কাছে জানা যায়, গতকাল (২৫ জুন) বিকেলে নবনিযুক্ত ইউএনও'র সঙ্গে বিএনপির শুভেচ্ছা বিনিময়কে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। উমর ফারুক অসুস্থ থাকায় প্রকৃত ঘটনা পরিবারের কেউই সঠিকভাবে বলতে না পারলেও উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান জানান, গতকাল আমরা পাটগ্রাম বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিলে নবনিযুক্ত পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাসকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়ার কিছু সময় পর উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক উমর ফারুক পরিষদ চত্বরে আসে। কেন উমর ফারুককে শুভেচ্ছা বিনিময়ে সঙ্গে রাখা হয়নি মর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করে উচ্চবাক্য শোনান এবং এজন্য উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেলকে দোষারোপ করে খারাপ ভাষায় গালাগালের কথা জানান।
রাগারাগি করে ফারুক ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরপরই ওয়ালিউর রহমান সোহেল বিষয়টি তাৎক্ষণিক লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলুকে অবগত করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এমনকি তার বরাবর রাতেই হোয়াটসঅ্যাপে একটি অভিযোগও পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।
অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা সাপেক্ষে বহিষ্কারেরও দাবি করা হয় জানিয়ে বিএনপির এই নেতা আরও জানান, ওয়ালিউর রহমান সোহেল পরে আমাকে বলেন সবাইকে মূলত অবগত করেছিলেন এবং ফারুককেও কল দিয়েছিল কিন্তু সেই কল সে সময় ঢুকেনি। তিনি বলেন, আমরা একটু ধৈর্য ধরতে পারতাম। তেমন কিছুই না বিষয়টা। মূলত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আমাদের মাঝে। এ ঘটনায় সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, উমর ফারুকের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের ঘোষণা আসবে এমন তথ্য পেয়ে তিনি গভীর রাতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
আত্মহত্যার চেষ্টা করা উমর ফারুক লাইভ করার সময় ওই পোস্টে কারণ হিসেবে একটি মন্তব্য উল্লেখ করেন। লেখাগুলো নিচে দেওয়া হলো:
'আমি বিএনপি করে নিজের লাইফটি শেষ করেছি। সামান্য একটি ঘটনা নিয়ে আমার নামে লালমনিরহাটে দুলু ভাই ও রাজীব ভাইকে ভিন্নভাবে অভিযোগ করে। আমি হাত ধরে মাফ চেয়েছি। দলের জন্য কোনো প্রকার খারাপ কাজ করি নাই। পাটগ্রাম উপজেলার সুবিধাবাদী সুযোগ সন্ধানীরাই এখন সব কিছু করছে। দখল থেকে চাঁদাবাজি, দলের ক্ষতি করে চলেছে। আমি কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে যা কিছু ছিল তা বিক্রি করে তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা লিফলেট উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বাজারে বাজারে বিতরণ করে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। পাটগ্রামে কেউ বলতে পারবে না যে, ৫ তারিখের পর আমি কারো কাছে গিয়ে টাকা-পয়সা বা চাঁদাবাজি বা কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি, কেউ বলতে পারবে না দলের কারণে কতদিন বাড়িতে থাকতে পারিনি। বউ-বাচ্চা না খেয়ে ছিল। পুরো দলের জন্য ফেসবুক থেকে শুরু করে সবকিছুতেই দলের কাজ করে গেছি, সরাসরি মারও খেয়েছি।
এখন সুদিনে এসে কিছু সুবিধাবাদী মানুষের কারণে আজকে আমাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। সকালে আমার মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা, জানি না মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা। তবে একটি কথা, দল করে কী পেলাম? আর আমি তো জোরে কথা বলি, এটা আমার অভ্যাস, তবে কারো ক্ষতি করি নাই। আমার বউ-বাচ্চাকে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম। আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না কারণ সৎভাবে জীবন যাপন করা এবং সঠিকভাবে দল করলে আজকে আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। বিদায় দুনিয়া। পাটগ্রাম উপজেলার কিছু বিএনপির জন্য খুবই ভালো হবে আমি না থাকলে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান আপনি যদি আমার এই নিউজ দেখেন, তাহলে দলের সুবিধাবাদীদেরকে দল থেকে বাদ দেবেন। বিদায়, অনেক কষ্টের, এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম কারণ আমি কোনো সময় কারো কাছে নত হতে শিখিনি, তারপরও আজকে উনার হাত ধরে ক্ষমা চাইছি, বিদায়। জানি না আমার বউ-বাচ্চার কী হবে, তবুও আমি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম কারণ আমি নিজেই বেশ কিছুদিন থেকে অসুস্থ, তারপরও কারো কাছে কখনো হইনি।'
ইমরান