ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

দুধ বা রঙ চা নয়, সকালে নীল চা খেলে মিলবে অদ্ভুত শক্তি!

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২৭ জুন ২০২৫

দুধ বা রঙ চা নয়, সকালে নীল চা খেলে মিলবে অদ্ভুত শক্তি!

ছবি: সংগৃহীত

কিছু সকাল দ্রুত কাটে, কিছু কিছু সকাল ভারী মনে হয়। কিন্তু দিনের শুরু যদি হয় এক কাপ নরম নীল চায়ের সঙ্গে, তাহলে মনেই হয় শান্তির এক অদ্ভুত অনুভূতি। এই নীল চা তৈরি হয় ক্লিটোরিয়া টারনাটিয়া ফুলের পাপড়ি দিয়ে, যা ভারতে আপ্রজিতা বা শঙ্খপুষ্পী নামে পরিচিত। এটি আয়ুর্বেদ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যের অংশ। এর উজ্জ্বল নীল রং শুধু সুন্দর নয়, এতে রয়েছে অসাধারণ উপকারী যৌগ।

এটি শুধু একটা ট্রেন্ড বা ইনস্টাগ্রাম ফ্রেন্ডলি ড্রিঙ্ক নয়। নিয়মিত সকালে নীল চা খাওয়ার বেশ কিছু চিকিৎসাগত উপকারিতা রয়েছে। চলুন জানি, এর সঠিক সুফল কী কী, এবং কী না।

১. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

নীল চাকে ‘মেমোরি ইলিক্সির’ নামেও ডাকা হয়। আপ্রজিতা ফুলের পাপড়িতে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন নামক প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা এই রঙের জন্য দায়ী।

কিছু প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে, ক্লিটোরিয়া টারনাটিয়া স্মৃতি ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি অ্যাসিটিলকোলিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা শেখার সঙ্গে যুক্ত। যদিও এখনো মানুষের ওপর বড় ধরনের গবেষণা হয় নি। তবে ক্যাফেইনহীন এই নীল চা সকালে খেলে মন শান্ত থেকে দিনের কাজের জন্য মনোযোগ বাড়ে।

২. স্ট্রেস কমায়, কিন্তু ঘুম লাগায় না

অনেক শান্তিদায়ক চায়ে ঘুম বা অলসতা চলে আসে। কিন্তু নীল চা এরকম নয়। এতে ক্যাফেইন নেই, তবু এটি উদ্দীপনা কমায় এবং মন শান্ত রাখে।

নীল চায়ের ফ্ল্যাভোনয়েড স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে প্রাথমিক গবেষণা দেখিয়েছে। যারা নিয়মিত এটি পান করেন, তারা বলেন যে এতে দিনের শুরুতে শান্তির অনুভূতি আসে, আবার ‘জাগরণ’ করতেও হয় না। তাই এটা মেডিটেশন, ডায়েরি লেখার বা হালকা ব্যায়ামের আগে খাওয়ার জন্য আদর্শ।

৩. মৃদু ডিটক্স, শরীর পরিশোধন

বাজারে অনেক ডিটক্স ড্রিঙ্ক পাওয়া যায়, অনেকেই শরীরের জন্য অতিরিক্ত কড়া ও ডিহাইড্রেটিং হয়। কিন্তু নীল চা আলাদা।

ক্লিটোরিয়া টারনাটিয়া হালকা প্রস্রাববর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে ধীরে ধীরে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। তবে এটা কোনো ঝটপট বা শক্তিশালী ডিটক্স নয়, বরং কিডনিকে ধীরে ধীরে সাপোর্ট করে।

৪. চোখের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক

আয়ুর্বেদে আপ্রজিতা ফুল চোখের যত্নে ব্যবহৃত হয়। মনে করা হয় এটি দৃষ্টি শক্তি বাড়ায় এবং চোখের ক্লান্তি কমায়।

ফুলে থাকে প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিনস নামক যৌগ, যা চোখের সূক্ষ্ম রক্তনালীর রক্ত সঞ্চালন ভালো করে। যদিও মানুষের ওপর প্রচলিত পরীক্ষায় এটা নিশ্চিত হয়নি, যারা অনেকক্ষণ স্ক্রিনের সামনে কাজ করেন বা বই পড়েন, তাদের চোখের জন্য দীর্ঘমেয়াদে উপকারী হতে পারে।

৫. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

অনেকে মনে করেন নীল চা ওজন কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু তার প্রমাণ খুব কম। তবে এটি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্লিটোরিয়া টারনাটিয়া এক্সট্র্যাক্ট খাওয়ার পরে খাবারের পর রক্তে শর্করার ওঠানামা কমে প্রাণীদের মধ্যে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করার সম্ভাবনা দেখায়। খালি পেটে নিলে দিনের বাকি সময়ের জন্য রক্তের গ্লুকোজ ভালো রাখা যেতে পারে, তবে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার বিকল্প নয়।

৬. শক্তিশালী প্রদাহনাশক প্রভাব

প্রদাহ অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগের মূল কারণ, যেমন জয়েন্টের ব্যথা ও হৃদরোগ।

নীল চায়েতে থাকে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনল, যা প্রদাহ কমায়। তাই এটা শুধুই মন ভালো রাখার জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক। বিশেষ করে যারা বেশি সময় বসে থাকে বা অনিয়মিত খায়, তাদের জন্য এটা খুব উপকারী।

সতর্কতা:

  • চায়ের সঙ্গে চিনি না দেওয়া ভালো, কারণ চিনি এর উপকারিতা কমিয়ে দেয়।

  • অতিরিক্ত পরিমাণে নীল চা খাওয়া উচিত নয়।

নীল চা প্রস্তুত করার পদ্ধতি:

১ থেকে ১.৫ কাপ পানি গরম করুন।
৫-৬টি শুকনো আপ্রজিতা ফুল পানিতে দিন এবং ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে ঢেকে রাখুন।
তারপর ছেঁকে নিন। ইচ্ছে হলে মধু বা লেবুর রস দিতে পারেন। লেবু দিলে চায়ের রং নীল থেকে সুন্দর বেগুনী হয়ে যাবে। গরম কিংবা ঠান্ডা দুটো ভাবেই খাওয়া যায়।

আবির

×