ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

সঙ্গীকে সন্দেহের চোখে দেখছেন? জেনে নিন কি বিপদ ডেকে আনছেন!

মেহেদী কাউসার

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১ জুলাই ২০২৫

সঙ্গীকে সন্দেহের চোখে দেখছেন? জেনে নিন কি বিপদ ডেকে আনছেন!

ছ‌বি: প্রতীকী

ভালোবাসার সম্পর্কের মূলভিত্তি হলো বিশ্বাস। তবে এই বিশ্বাসে একটু চিড় ধরলেই শুরু হয় সন্দেহ। সঙ্গী কোথায় গেল, কার সঙ্গে কথা বলছে, কেন এতক্ষণ কল ধরল না— এমন শত প্রশ্ন ঘুরতে থাকে মনে। কিছুতেই মন শান্ত থাকে না। মনে হয়, কিছু একটা লুকানো হচ্ছে। একবার শুরু হলে এই সন্দেহ যেন থামতেই চায় না।

সঙ্গীর প্রতি সন্দেহ প্রথমে খুব স্বাভাবিক লাগতে পারে। অনেকে বলেন, “ভালোবাসি বলেই তো চিন্তা করি।” কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অযথা সন্দেহ ভালোবাসার প্রকাশ নয়, বরং এটি একটি বিষাক্ত অভ্যাস যা ধীরে ধীরে সম্পর্ককে নিঃশেষ করে দিতে পারে।

সন্দেহ থেকে শুরু হয় নিয়ন্ত্রণ। সঙ্গীকে কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে কথা বলছে, কী পোশাক পরছে, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কাকে ফলো করছে— এসব নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন। এতে একসময় সম্পর্ক হয়ে ওঠে চাপের, ভালোবাসার নয়।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সন্দেহ যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন তা মানসিক রোগের লক্ষণও হতে পারে। অনেক সময় পূর্ব অভিজ্ঞতা, আস্থাহীনতা বা নিজের ভেতরের নিরাপত্তাহীনতা থেকে এই সন্দেহ জন্ম নেয়।

ঢাকার বসুন্ধরায় বসবাসকারী তানভীর আহমেদ (ছদ্মনাম) বলেন, “আমি সবসময় ভাবতাম, আমার স্ত্রী হয়তো আমাকে ঠিকভাবে ভালোবাসে না। যখনই সে ফোনে হাসতো, আমি ভাবতাম কার সঙ্গে কথা বলছে। পরে বুঝেছি, এটা আমার নিজের ভেতরের সমস্যা। ওই সন্দেহে আমরা প্রায়ই ঝগড়া করতাম। সম্পর্কটা অনেক খারাপ জায়গায় চলে গিয়েছিল।”

সন্দেহ শুধু সম্পর্কেই নয়, একজন মানুষের মানসিক শান্তির ওপরও বড় প্রভাব ফেলে। যে মানুষটি সবসময় সঙ্গীকে নিয়ে চিন্তিত, সে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। রাতের ঘুম কমে যায়, রাগ-হতাশা বাড়ে। এভাবেই একসময় মানসিক অবসাদ শুরু হয়।

অন্যদিকে, যে মানুষটি বারবার সন্দেহের মুখে পড়ছেন, তার মধ্যেও তৈরি হয় ক্লান্তি, বিরক্তি আর দুঃখ। সে নিজেকে প্রমাণ করতে করতে একসময় ভেঙে পড়ে। সম্পর্কের মাঝে আসে দূরত্ব, ঠান্ডা আচরণ, আর শেষমেশ ভেঙে যাওয়া।

তবে সন্দেহ থাকলেই যে সম্পর্ক শেষ হবে, তা নয়। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো নিজেকে প্রশ্ন করা, এই সন্দেহের পেছনে আসল কারণ কী? সঙ্গী আসলেই কোন আচরণে সন্দেহ তৈরি করছেন, নাকি এটি শুধু নিজের মনের ভয়?

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, সন্দেহ হলে খোলামেলা কথা বলুন। অভিযোগ না করে জানতে চাওয়া উচিত। আর যদি বোঝা যায় যে এই সন্দেহ একতরফা এবং অহেতুক, তাহলে নিজেকেই থামাতে হবে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নেওয়া খুবই জরুরি।

সাইকোলজিস্টরা বলেন, “অনেক সময় মানুষ বোঝেই না যে সে সন্দেহের কারণে সম্পর্ক নষ্ট করছে। সঙ্গীর প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা মানে ভালোবাসা নয়, এটা আসলে নিজের মানসিক অস্থিরতা।”

সন্দেহ যখন ভালোবাসাকে ছাপিয়ে যায়, তখন সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে পড়ে। তখন সেখানে থাকে না বিশ্বাস, সম্মান বা নিরাপত্তা— থাকে শুধু দোষারোপ, চাপ আর হতাশা।

সুতরাং, যদি আপনি সঙ্গীকে সন্দেহ করতে থাকেন, তাহলে থামুন। ভাবুন, এতে আপনি কী হারাচ্ছেন? সম্পর্কের শান্তি, নিজস্ব মর্যাদা আর ভালোবাসা সবই একে একে হারিয়ে যেতে পারে।

ভালোবাসা মানে শুধুই ভালো লাগা নয়, বিশ্বাস করাও। সন্দেহ নয়, সম্পর্কের ভিত্তি হোক আস্থা আর বোঝাপড়ায়। সম্পর্ক বাঁচাতে হলে আগে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্লেষণ, খোলামেলা যোগাযোগ, আর নিজের নিরাপত্তাহীনতাকে চিনে নেওয়া।

কারণ, সন্দেহে তিলে তিলে সম্পর্ক মরলেও, আস্থায় গড়ে ওঠে ভালোবাসার সত্যিকারের ভিত্তি।

এম.কে.

×