ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

মাসের শুরুতে আয় পেলেন? জেনে নিন ধর্ম অনুযায়ী বন্টনের নিয়ম

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ১ জুলাই ২০২৫

মাসের শুরুতে আয় পেলেন? জেনে নিন ধর্ম অনুযায়ী বন্টনের নিয়ম

ছবি: সংগৃহীত

মাসের প্রথম সপ্তাহ। হয়তো আপনি বেতন পেয়েছেন, ব্যবসায় লাভ এসেছে, কেউ হয়তো কৃষিকাজ বা পারিশ্রমিকে আয় করেছেন। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি—এই টাকাটা শুধুই কি আপনার? নাকি কারও প্রাপ্যও আছে এর মাঝে?

ধর্মীয় গ্রন্থগুলো বলছে, আয়ের পুরোটা নিজের জন্য নয়। পরিবার, সমাজ, অসহায় মানুষ, এমনকি সৃষ্টিকর্তার জন্যও এতে রয়েছে নির্ধারিত অংশ। মাসের শুরুতেই তাই প্রয়োজন কিছু আত্মজিজ্ঞাসা, কিছু নৈতিক হিসাব।

চলুন, দেখে নিই—আপনার ধর্ম কী বলছে এই আয় নিয়ে, কাকে দেবেন, কতটুকু দেবেন, আর কেনই বা দেবেন—


🕌 ইসলাম কী বলে?

ইসলামে আয়ের প্রথম দায়িত্ব পরিবার। এরপর আছে জাকাত, যা বাধ্যতামূলকভাবে দরিদ্রের জন্য বরাদ্দ (২.৫%)। এছাড়া সদকা—অর্থাৎ ঐচ্ছিক দান এবং ওয়াক্ফ—স্থায়ী দানের ব্যবস্থাও রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থীর ও বঞ্চিতের হক রয়েছে।”

অর্থাৎ, আয়ের মধ্যে গরিবের অধিকার প্রোথিত। মাসের শুরুতেই সেই হক আদায় করলে আপনার আয় হবে বরকতময়, সমাজ হবে ভারসাম্যপূর্ণ।


🕉️ হিন্দু ধর্ম কী শেখায়?

হিন্দুধর্মে আয়কে ‘অর্থ’ বলা হয়, যা জীবনের চার মূল স্তম্ভের একটি (ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ)। কিন্তু এই অর্থ যেন নিজের ভোগে আটকে না যায়, তার জন্যই রয়েছে দান, অতিথি আপ্যায়ন ও সঞ্চয়ের নির্দেশনা।

চাণক্য নীতি বলছে, "আয়ের এক ভাগ খরচ করো, এক ভাগ দান করো, এক ভাগ সঞ্চয় করো, এক ভাগ পুনঃবিনিয়োগ করো।"

এই দর্শনে দান শুধু মানবতা নয়, আত্মশুদ্ধির পথও।


✝️ খ্রিস্টান ধর্ম কী নির্দেশ দেয়?

খ্রিস্টধর্মে আয় ধরা হয় ঈশ্বরের দান হিসেবে। তাই তার একটি অংশ ফেরত দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। প্রাচীন রীতিতে প্রতি মাসে আয়ের ১০% ‘টাইথ’ চার্চে দান করা হয়।

বাইবেল বলে, “যে গরিবের প্রতি দয়ালু, সে ঈশ্বরকে ঋণ দেয়।”

অর্থাৎ ঈশ্বর খুশি হন দানের মাধ্যমে। আপনি যদি মাসের শুরুতেই এমন কিছু দেন, তা আপনাকেও আধ্যাত্মিক শান্তি দেবে।


☸️ বৌদ্ধরা কীভাবে দেখে আয়?

বৌদ্ধধর্মে বলা হয়—লোভের সংবরণ ও দানের মাধ্যমে হৃদয়ের প্রশান্তি আসে।
“দাতা ও গ্রহীতা—উভয়েই সুখ পায়।”

গৃহীদের আয় থেকে ভিক্ষুদের জন্য, সমাজের জন্য, অসহায়দের জন্য দান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে জন্ম নেয় সহানুভূতি, ক্ষয়ে যায় অহং।

 

মাসের শুরু মানেই কেবল নতুন টাকায় বাজার করা নয়—নতুনভাবে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া, জীবনের ভারসাম্য রক্ষা, আত্মার পরিচর্যা করা। আয় যেন ভোগে সীমাবদ্ধ না থেকে পুণ্য, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধে পরিণত হয়।

আপনার ধর্ম যাই হোক না কেন, একটি বিষয় সব ধর্মেই স্পষ্ট—
অন্যের জন্য কিছু রেখে দিন। তবেই আপনার আয় হয়ে উঠবে সত্যিকার সার্থক।

Mily

×