
খাবার শুধু শরীরকে পুষ্টিই দেয় না, বরং এটি মারাত্মক রোগ যেমন ক্যান্সার থেকেও আমাদের রক্ষা করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কোন কোন উপাদান রয়েছে, তা শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসার চেয়েও দীর্ঘমেয়াদে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ক্যান্সারসহ নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও প্রাকৃতিক প্রতিরোধকারী যৌগে পরিপূর্ণ। এগুলো দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে সহজেই অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত,নিয়মিত গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
১. বেরিজ (ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, আমলকি)
বেরিজকে বলা হয় ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুপারস্টার’। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্থোসায়ানিনের মতো ক্যানসার প্রতিরোধী ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। এরা শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল নিস্ক্রিয় করে, যা কোষ ধ্বংস করে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
আমলকি বা ভারতীয় গোসবারি বিশেষভাবে পলিফেনলে সমৃদ্ধ এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ও লিভার রক্ষায় কার্যকর হিসেবে বিবেচিত। বেরিজ সহজেই স্মুদি, ওটস কিংবা স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যায়। প্রতিদিন এক মুঠো বেরি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
২. ব্রোকলি ও ফুলকপি
এই সবজিগুলোতে রয়েছে সালফোরাফেন ও গ্লুকোসিনোলেটস নামের প্রাকৃতিক যৌগ, যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ক্রুসিফেরাস সবজি লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে, ফলে প্রতিদিনের খাবারে এটি রাখার উপযোগিতা অনেক। হালকা সেদ্ধ করে, রোস্ট করে বা সালাদে মিশিয়ে সহজেই খাওয়া যায়। নিয়মিত সপ্তাহে কয়েকবার খেলে এটি বিশেষ করে কোলন, স্তন এবং ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।
৩. রসুন ও হলুদ
রান্নাঘরের চিরপরিচিত দুটি উপাদান রসুন ও হলুদ শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বহন করে। রসুনে থাকা অ্যালিসিন উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি দমন করে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করে তোলে।
হলুদের সক্রিয় উপাদান ‘কারকিউমিন’ প্রদাহ প্রতিরোধে ও টিউমার গঠনে বাধা দেয়। প্রতিদিনের রান্নায় কাঁচা রসুন যোগ করা বা চায়ে কিংবা তরকারিতে হলুদ ব্যবহারে স্বাস্থ্যের উপকারের পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব।
৪. বাদাম ও আখরোট
বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই ও সেলেনিয়ামের মতো খনিজ উপাদান, যা কোষের ক্ষয় মেরামত করে এবং প্রদাহ কমায়।আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ও পলিফেনল ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে ধীর করে দিতে পারে।
আলমন্ড হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে ও ফাইবার সরবরাহ করে। প্রতিদিন এক মুঠো মিশ্র বাদাম শুধু ক্যানসার প্রতিরোধেই নয়, বরং মস্তিষ্ক, ত্বক ও হৃদযন্ত্রের জন্যও দারুণ উপকারী।
জীবনধারায় ছোট পরিবর্তন বড় রোগ প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। উপরোক্ত খাবারগুলো শুধু সুস্বাদু নয়, বরং ক্যান্সার প্রতিরোধেও প্রমাণিতভাবে কার্যকর। তাই আজ থেকেই খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন এসব পুষ্টিকর উপাদান, সুস্থ থাকুন দীর্ঘদিন।
সূত্র:https://tinyurl.com/25uev6y2
আফরোজা