
ছবি: প্রতীকী
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অনেকেই পেটের মাঝামাঝি ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন। এই ব্যথা ঘণ্টাখানেক পর নিজে থেকেই কমে আসে, বিশেষ করে সকালের নাশতা কিংবা দুপুরের খাবারের পর। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই চিন্তিত হন, আবার কেউ কেউ এটিকে গুরুত্ব না দিয়েই দিনের কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এ ধরনের উপসর্গ হালকাভাবে নেওয়ার মতো নয়। এটি হতে পারে গ্যাস্ট্রিক বা সাধারণভাবে যাকে ‘অম্বল’ বলা হয়—তারই একটি লক্ষণ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ সমস্যাকে বলা হয় ‘গ্যাস্ট্রাইটিস’ বা ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে ঘুমানোর সময় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার কারণে পাকস্থলীতে অ্যাসিড জমে যায়। এই অ্যাসিড যখন খালি পেটে সকালের দিকে সক্রিয় থাকে, তখন তা পেটের দেয়ালের সঙ্গে সংস্পর্শে এসে ব্যথা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যারা দেরিতে রাতের খাবার খান, খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়েন বা নাস্তার আগে চা-কফি খেয়ে অভ্যস্ত, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, “খালি পেটে থাকা অবস্থায় পেটে যে অ্যাসিড তৈরি হয়, তা যদি সময়মতো খাবার না পায়, তবে তা পাকস্থলীর দেয়ালে গ্যাস তৈরি করে বা জ্বালাভাব সৃষ্টি করে। এই কারণেই সকালে ব্যথা হয়, এবং দুপুরে খাবার খাওয়ার পর সেটি কমে যায়।”
সাধারণত, গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গ হিসেবে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়, তার মধ্যে রয়েছে খালি পেটে ব্যথা, বুকজ্বালা, ঢেঁকুর ওঠা, বমিভাব, এমনকি মুখে টক পানি আসা। তবে অনেক সময় এই ব্যথা বুকের নিচে কিংবা পেটের মাঝখানে হলেও রোগী এটিকে হার্টের সমস্যা ভেবে ভুল করেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শুধু ব্যথা নয়, পেট ফাঁপা, অস্বস্তি বা অতিরিক্ত গ্যাস জমা—এসবও গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এই সমস্যাকে অবহেলা করলে তা পরবর্তীতে পেপটিক আলসারে রূপ নিতে পারে। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াও দীর্ঘদিনের অম্বলের পেছনে দায়ী হতে পারে, যা পরবর্তীতে পাকস্থলীর জটিলতায় পরিণত হতে পারে।
এ বিষয়ে জাতীয় গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, “যদি রোগী নিয়মিত সকালে এই ব্যথা অনুভব করেন এবং দুপুরে বা খাবারের পরে সেটি সেরে যায়, তাহলে অবশ্যই তার খাবারের রুটিন ঠিক করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া জরুরি যে এটি শুধু অম্বল, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো জটিলতা আছে।”
চিকিৎসকরা বলেন, এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করলেই অনেকাংশে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন—নিয়মিত সময়মতো খাওয়া, অতিরিক্ত তেল-ঝাল এড়িয়ে চলা, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা এবং চা বা কফি খাওয়ার আগে খালি পেটে কিছু হালকা খাবার খাওয়া। রাতে খাওয়ার পরপরই শুয়ে না গিয়ে অন্তত ১ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করা এবং মানসিক চাপ কমানোও এই সমস্যার প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।
যদিও সকালের এই পেটব্যথা অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের সাধারণ লক্ষণ, তবে এটি একেবারে নিশ্চিত হতে রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, কখনও কখনও পিত্তথলির পাথর, লিভারের সমস্যা কিংবা প্যানক্রিয়াসের প্রদাহও এমন উপসর্গ তৈরি করতে পারে।
অতএব, সকালে পেটব্যথা এবং দুপুরে উপশম পাওয়ার বিষয়টি যদি বারবার ঘটে, তাহলে একে অবহেলা না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়াই সর্বোত্তম। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় রোগ চিহ্নিত করা গেলে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
এম.কে.