ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

৭ জুলাই সেই বাংলা ব্লকেড, দাবিতে অটল ছিল তরুণ প্রজন্ম

আল জুবায়ের, ঢাকা

প্রকাশিত: ২১:১০, ৭ জুলাই ২০২৫

৭ জুলাই সেই বাংলা ব্লকেড, দাবিতে অটল ছিল তরুণ প্রজন্ম

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনকারীরা কোটা বাতিল-সহ চার দফা দাবিতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে একটি কর্মসূচি পালন করে। সেদিনের এ কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। শাহবাগ মোড়, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, সায়েন্সল্যাব মোড়, চানখারপুল, নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেয় আশেপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির কারণে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে এদিনও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। তীব্র গরম উপেক্ষা করেও আন্দোলনকারীরা যেন ঝিমিয়ে না পড়েন তাই নানা ধরণের গান এবং স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন শাহবাগের চারপাশ। কয়েক হাজার আন্দোলনকারী অবস্থান নেন শাহবাগ মোড়ে। বেশিরভাগের মাথায় বাঁধা ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। কেউ কেউ মাথায় ‘কোটা মুক্ত দেশ চাই’ এমন ফিতাও বেঁধে এসেছিলেন। সড়কে লেখা হচ্ছিল গ্রাফিতি।

সেখানে লেখা ছিল ‘বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ও ‘কোটাসহ সকল বৈষম্য নিপাত যাক’। আন্দোলনে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের যদি বাধ্য করা হয় আমরা প্রয়োজনে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা আজ শাহবাগে জড়ো হয়েছি। পরবর্তী কর্মসূচি যা দেওয়া হবে, আমরা সে অনুযায়ী পালন করব।

এদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ফলে বিকেল তিনটা থেকে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকার প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। মিরপুর সড়ক, সাইন্সল্যাব মোড়, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর, রামপুরা, হাতিরঝিল, নারায়ণগঞ্জ, পোস্তোগোলা, পাগলা, ডেমরা স্টাফ-কোয়ার্টার, সিলেট, চিটাগাং রোড, শনির আখড়া, সাইনবোর্ডে এসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সে সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি চলবে। সারা দেশের ছাত্রসমাজ এই ইস্যুতে একত্রিত হয়েছে। কোটার নামে বৈষম্য চলতে দেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা প্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করতে হবে। তারা বলেন, কোটার নামে মুক্তিযুদ্ধকে অপমানিত করা হচ্ছে। যেখানে বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেখানে নতুন করে কোটার মাধ্যমে সেই মুক্তিযুদ্ধকে নিচে নামানো হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধাদের নাতি-পুতিরা কেন এমন সুবিধা পাবে। এটি যদি বংশ পরস্পরায় চলতেই থাকে তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কোটা এখন শিক্ষার্থীদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। যারা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেতে ভয় পায় তারাই কোটার পক্ষে সাফাই গাইছে। আমরা চাই অবিলম্বে কোটাপ্রথা বাতিল করা হোক। সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের সমান অধিকার। এর মধ্যে কেউ আবার কোটা দেখিয়ে বেশি সুবিধা গ্রহণ করবে তা হতে দেওয়া হবে না।

এর আগে কোটা বাতিলের দাবিতে অনলাইন-অফলাইন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা, পাশাপাশি ক্লা-পরীক্ষা বর্জন করেন তারা। এদিকে শুরুর দিকে কোটা আন্দোলনকে তুচ্ছ ভেবে ছুঁড়ে ফেললেও পরবর্তীতে টনক নড়ে তৎকালীন সরকারের নীতি নির্ধারকদের। শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে প্রকাশ্যে মত না দিলেও তাদের দাবি যৌক্তিক বলে মনে করেন অনেকেই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর বক্তব্য ছাত্রজনতা ক্ষুদ্ধ হয়। বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, কোটা নিয়ে সরকারের কি করার আছে? এটা আালতের বিষয়। এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিকালে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা; আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই ইত্যাদি বলে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দিতে শুরু করে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। এতে কোটা আন্দোলন আরও তীব্র হতে শুরু করে।

 

রিফাত

×