
ছবি: সংগৃহীত
ইউরিক অ্যাসিড এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ, যা শরীরের পিউরিন নামক উপাদান ভেঙে তৈরি হয়। কিছু খাবার ও পানীয়তে পিউরিন থাকে। সাধারণত সামান্য পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড রক্তে মিশে কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাব হয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে, অর্থাৎ হাইপারইউরিসেমিয়া হলে শরীরে শুরু হয় নানান বিপজ্জনক ক্ষতি, যেমন গেঁটেবাত, কিডনি স্টোন—যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। চলুন জেনে নিই ইউরিক অ্যাসিড কীভাবে নীরবে শরীরের ক্ষতি করে:
১. রক্তনালী ও হার্টে মারাত্মক ক্ষতি
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড হার্টের জন্য বিপজ্জনক! এটি রক্তনালীর ভিতরের আস্তরণে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে। ফলে রক্তনালী শক্ত ও অনমনীয় হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এতে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও এমনকি প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
২. কিডনি নষ্টের আশঙ্কা
কিডনি শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের করে। কিন্তু মাত্রা বেশি হলে ইউরিক অ্যাসিডের ছোট ছোট ক্রিস্টাল তৈরি হয়, যা কিডনিতে জমতে থাকে। যদিও শুরুতে ব্যথা হয় না, তবে দীর্ঘদিনে এগুলো কিডনির কোষ নষ্ট করে দেয়, বাড়ে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা কিডনি ফেলিওরের ঝুঁকি।
৩. মেটাবলিক সিনড্রোমের কারণ
মেটাবলিক সিনড্রোম মানে একসঙ্গে কয়েকটি বিপজ্জনক শারীরিক সমস্যা, যেমন—পেটের চর্বি, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্তশর্করা, উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড ও কম এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরল। গবেষণা বলছে, ইউরিক অ্যাসিড শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, যা ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. হাড় ও জয়েন্টের ক্ষতি
গেঁটেবাত হওয়ার আগেই ইউরিক অ্যাসিড ধীরে ধীরে জয়েন্ট ও চারপাশের টিস্যুতে জমতে থাকে। এতে হাড়ের কার্টিলেজ ক্ষয় হতে থাকে, ফলে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যেতে পারে, ফুলতে পারে এবং ধীরে ধীরে আকারও বিকৃত হতে পারে। শুরুতে ব্যথা না হলেও পরে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. কিডনি স্টোন
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডে কিডনি স্টোন হওয়া খুবই সাধারণ। ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল জমে পাথর তৈরি করে, যা অনেক সময় ছোট আকারে প্রস্রাবে বের হয়ে যায়, আবার বড় হলে প্রস্রাবের পথ বন্ধ করে দিতে পারে। এতে সংক্রমণ বা স্থায়ী কিডনি ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
৬. উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড সরাসরি উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। ইউরিক অ্যাসিড রক্তনালী সঙ্কুচিত ও শক্ত করে তোলে, ফলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। শুরুতে কোনো উপসর্গ না থাকলেও পরে এটি মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে ওঠে।
৭. সারা শরীরে প্রদাহ
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমে নীরব প্রদাহ তৈরি করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে অল্প অল্প করে প্রদাহ হতে থাকে। এই প্রদাহ ধীরে ধীরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা শুরুতে বোঝা যায় না, কিন্তু শরীরের অন্দরে নীরবে ভয়ংকর ক্ষতি করে। তাই শরীরের প্রতি সচেতন হন, সময়মতো রক্ত পরীক্ষা করুন, আর প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আবির