
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, "২০২৪ সালের জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নবজাগরণের বিস্ফোরণ। এটি শুধু একটি আন্দোলন ছিল না—এটি ছিল ফ্যাসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের শিকড় উৎপাটনের এক ঐতিহাসিক শুরু।"
তিনি বলেন, “এই আন্দোলনে ছাত্রশিবির কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় কৃতিত্ব দাবি করে না। বরং আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি। মূল ভূমিকা পালন করেছেন আল্লাহর সাহায্য, দেশের ছাত্রসমাজ, শিক্ষক, চাকরিজীবী, প্রবাসী, নারী ও শিশু সহ আপামর জনসাধারণ।”
জুলাই ঘোষণাপত্র না থাকায় ব্যথিত শহীদ পরিবারগুলো
জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি সম্প্রতি রংপুর সফরে গিয়ে ১০-১২টি শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। পরিবারগুলোর প্রশ্ন ছিল—জুলাই আন্দোলনের ঘোষণাপত্র কেন এখনো প্রকাশিত হয়নি? তিনি বলেন, “আমি তাদের সামনে একেবারেই বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। কোনো উত্তর দিতে পারিনি, বরং লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চেয়েছি।”
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে আন্দোলন পরিচালনার কৌশল
শিবির সভাপতি জানান, সরকার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে, ব্লক রেট দিয়ে গণগ্রেপ্তার চালায়। সে সময় ছাত্রশিবির একটি বিকল্প পরিকল্পনা নেয়—যার আওতায় দেশের প্রতিটি এলাকায় শিবিরের সদস্যরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন পরিচালনা করে। তিনি বলেন, “আমরা স্পট এবং দায়িত্বশীল ঠিক করে দিয়েছি, স্থানীয় জনশক্তি এবং সাধারণ ছাত্রদের সমন্বয়ে আন্দোলন চলেছে।”
নারী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অবদান
জাহিদুল ইসলাম বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, "এই আন্দোলনে নারী বোনরা বুক পেতে ভাইদের রক্ষা করেছেন, অনেক নারী শহীদ হয়েছেন। ঢাকার উত্তরা ও যাত্রাবাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অনন্য।"
শাহাদাত ও নির্মমতার বিবরণ
তিনি স্মরণ করেন রাজশাহীর তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হান, চট্টগ্রামের ফয়সাল আহমেদ শান্ত এবং আবু সাঈদের শাহাদাতের মর্মন্তিক দৃশ্য। বলেন, “অনেক ভাই এখনো আহত, অনেকের চোখ আর কখনো ফিরে আসবে না, কারও কারও কৃত্রিম পা বসানো হয়েছে। এগুলো জাতির সামনে স্বীকৃতি পাওয়ার মতো ত্যাগ।”
ছাত্রশিবিরের নীরব কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতা
তিনি অভিযোগ করেন, অতীতে গণমাধ্যমে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম প্রচার না হওয়ায় ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। “আমাদের কার্যক্রম সবসময়ই চলমান ছিল, কিন্তু গণমাধ্যমে সেভাবে প্রকাশ পায়নি,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আন্দোলনের সময় আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম—দলীয় ব্যানার নয়, আমরা সবাই মাজলুম। আদর্শ-চিন্তা ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আন্দোলনটা সবার।”
জুলাই ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব ও সরকারের দায়িত্ব
জাহিদুল ইসলাম শেষদিকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যে রক্তের ওপর দিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই শাহাদাতের স্বীকৃতি দিতে হবে। আহত, নির্যাতিত, শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই বিপ্লব শুধু অতীত নয়, এটি ভবিষ্যতের পথ দেখাবে।”
আসিফ