
ছবি: জনকণ্ঠ
দক্ষিণ এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র ও জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। যে কোনো দেশের জনসংখ্যা সে দেশের জন্য আশীর্বাদ হলেও, এ বিপুল জনসংখ্যা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় উল্টো সমস্যায় পরিণত হয়ে বাংলাদেশের জন্য এক অভিশাপে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অসংখ্য জটিল সমস্যার অন্যতম হলো জনসংখ্যা সমস্যা।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম এবং এশিয়ার মধ্যে পঞ্চম জনবহুল দেশ। আদমশুমারি অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি ছাড়িয়েছে। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১৪০ জন মানুষ বসবাস করে এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৫২ শতাংশ। সাক্ষরতার হার মাত্র ৬৩.৭০%। এভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ এদেশের জনসংখ্যা হবে ২৩ কোটিতে। আগামী ২৫ বছরে দেখা যাবে, বর্তমানে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
দেশের প্রাপ্ত সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, ফলে বাংলাদেশেও জনসংখ্যাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এই জনসংখ্যাস্ফীতি বর্তমানে দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসরতা, আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব, জন্ম-মৃত্যুর ব্যবধান, বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহ, সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার, খাদ্যাভ্যাস, চিত্তবিনোদনের অভাব, পুত্রসন্তানের আশা, যৌথ পরিবার ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, নারী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু পদ্ধতির অভাবসহ নানাবিধ সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ফলে দেখা দিচ্ছে, খাদ্য ঘাটতি, নির্ভরশীল জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি, বেকারত্ব বৃদ্ধি, শিক্ষার অভাব, বস্ত্র ঘাটতি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সমস্যা, বাসস্থানের সংকট, ভূমির ওপর চাপ, মূলধন গঠন ও শিল্পায়নে ব্যাঘাত, পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা, নিম্ন মাথাপিছু আয়, দুর্নীতি ও অপরাধ বৃদ্ধি এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা। দ্রুত ও লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে দেশকে চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা সেবা, তথ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো দক্ষতা উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, বাল্যবিবাহ রোধে উদ্যোগ এবং গবেষণা ও মূল্যায়ন।
বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র ও দরিদ্র দেশে জনসংখ্যার এই অতিরিক্ত চাপ নিঃসন্দেহে প্রধান জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবেলায় মনে রাখতে হবে। এটি শুধু সংখ্যার প্রশ্ন নয়; এটি যেমন আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, তেমনি দর্শন, নীতিবোধ, ধর্ম, মনস্তত্ত্ব ও জৈবিক চাহিদার সাথেও জড়িত। তাই জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানে বাস্তবমুখী, টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অপরিহার্য।
রাজু আহমেদ, লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, মিরপুর, ঢাকা।
শহীদ