
ছবি: সংগৃহীত
মানবদেহের কোনো অঙ্গ হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আমরা অনেকেই ভাবি এই ঘটনা শুধু কোরবানির সময় গরু কাটাকাটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মারামারি, শিল্প দুর্ঘটনা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার মতো নানা ঘটনার ফলে মানুষের আঙুল, হাত বা পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং প্রাথমিক করণীয় সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেক সময় মূল্যবান অঙ্গটি বাঁচানো সম্ভব হয় না।
বিচ্ছিন্ন অঙ্গ পুনঃসংযোজন কি সম্ভব?
হ্যাঁ, বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ পুনঃসংযোজন (Replantation surgery) সম্ভব, তবে এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ দক্ষতা, অভিজ্ঞ টিম এবং সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা। এই কাজটি কেবল মাইক্রোসার্জারিতে অভিজ্ঞ প্লাস্টিক সার্জন দ্বারা সম্পন্ন করা সম্ভব, যেখানে বিচ্ছিন্ন রক্তনালী, স্নায়ু ও হাড় একত্র করে অঙ্গটি পুনরায় দেহে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু এই জটিল অস্ত্রোপচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময় এবং অঙ্গ সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি।
কীভাবে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ সংরক্ষণ করবেন?
অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দুর্ঘটনায় অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা যা করতে পারি তা হলো অঙ্গটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা, যাতে করে তা পুনঃসংযোজনের উপযোগী থাকে। নিচে ধাপে ধাপে করণীয় দেওয়া হলো—
১. পরিষ্কার করুন:
বিচ্ছিন্ন অঙ্গটি (যেমন আঙুল বা হাত) প্রথমেই নরমাল স্যালাইন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। নরমাল স্যালাইন না থাকলে পরিষ্কার, ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নেওয়াও চলবে। তবে ধুলা-বালি বা ময়লা লেগে থাকলে অবশ্যই ধুতে হবে।
২. শুকিয়ে নিন:
পরিষ্কার করার পর একটি পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে অঙ্গটি। ভেজা অবস্থায় রাখা যাবে না।
৩. পলিথিনে ভরুন:
শুকনো অঙ্গটি একটি পরিষ্কার পলিথিন ব্যাগে ভরে এর মুখ ভালোভাবে আটকে দিতে হবে যাতে কোনোভাবে পানির সংস্পর্শে না আসে।
৪. বরফে সংরক্ষণ করুন:
এরপর একটি আইস বক্সে বরফ দিয়ে, সেই বরফের মধ্যে পলিথিনে মোড়ানো অঙ্গটি রাখুন। আইস বক্স না থাকলে অন্য একটি পলিথিনে বরফ নিয়ে, তার ভেতরে অঙ্গ-ভর্তি পলিথিনটি রাখা যাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে অঙ্গটি যেন সরাসরি বরফের সংস্পর্শে না আসে, কারণ এতে ফ্রস্টবাইট হয়ে অঙ্গটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৫. তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিন:
বিচ্ছিন্ন অঙ্গ সংরক্ষণের পর তা নিয়ে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই মাইক্রোসার্জারি সুবিধা সম্পন্ন কোনো হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে। এই সময়সীমার মধ্যে না পৌঁছালে অঙ্গটির কোষগুলো মারা যেতে পারে এবং পুনঃসংযোজন সম্ভব নাও হতে পারে।
৬. চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ:
রওনা দেওয়ার আগেই মাইক্রোসার্জারিতে অভিজ্ঞ প্লাস্টিক সার্জনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে তিনি আগেভাগেই তার টিম এবং অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করতে পারবেন, সময় নষ্ট হবে না।
কেন এতটা গুরুত্ব?
অনেক সময় দেখা যায়, রোগী হাসপাতালে এসেছে, কিন্তু অঙ্গটি সঠিকভাবে সংরক্ষিত না থাকায় তা পুনঃসংযোজন সম্ভব হয়নি। অথচ সামান্য সচেতনতায় একটি হাত বা আঙুল রক্ষা পেতে পারত, একজন মানুষের জীবন হয়ে উঠত স্বাভাবিক। এই সচেতনতা শুধু চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের নয়, আমাদের সবার।
লেখক: মীর মোহাম্মদ ফয়সাল হোসাইন, শিক্ষার্থী, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।
আসিফ