ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায়

শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক বেশি, কর্মহীন সময় পার করছে শিক্ষকরা

রুমেল আফ্রাদ রুবেল, বেলাব, নরসিংদী

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ৬ জুলাই ২০২৫

শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক বেশি, কর্মহীন সময় পার করছে শিক্ষকরা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে, তেমনি পাঠদান কার্যক্রমেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০-এর নিচে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ধলির পার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭১ জন, ভাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯০ জন, চণ্ডিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭২ জন, গলগলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫ জন, দিঘলদী কান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৬ জন, ভাওয়ালের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫ জন, আওয়ালীকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯২ জন, রায়েরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৩ জন, চকমখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৯ জন, লোহাজুরি কান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭ জন, লাখপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৯ জন, বটেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৭ জন, বাজনাব সৈয়দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৪ জন, চিতাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৩ জন, হারিসাংগান কবি কুটির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭১ জন ও কাজীরটেক সবুজ পল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৯ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেলেও তা কেবলই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। সরেজমিনে বিদ্যালয়গুলোতে গেলে পর্যায়ক্রমে তার অর্ধেক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। অথচ ওইসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৪ থেকে ৭ জন করে। এর ফলে একজন শিক্ষকের ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ কমে আসছে, এবং শিক্ষকেরাও কর্মহীন সময় পার করছেন।

স্থানীয় এক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বর্তমানে অনেক অভিভাবক বাচ্চাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে বেসরকারি বা মাদ্রাসামুখী হয়েছেন। ফলে শিক্ষার্থী কমে গেছে, কিন্তু শিক্ষক রয়ে গেছেন পূর্বের নিয়োগ অনুযায়ী।”

বেলাব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জুলেখা শারমিন জানান, “আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলা দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়াতে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করছি, পাশাপাশি আমরা প্রতিনিয়ত অভিভাবক সমাবেশ করছি।”

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই অসম অনুপাত প্রমাণ করে শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীনতা ও এলাকা ভিত্তিক পর্যালোচনার অভাব। তাঁরা মনে করেন, স্কুলগুলোর বাস্তব চিত্র অনুসারে শিক্ষক পুনর্বিন্যাস ও শিক্ষার্থী ধরে রাখার কার্যকর কৌশল প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে।

উল্লেখ্য, একই উপজেলায় কিছু বিদ্যালয়ে আবার শিক্ষক সংকটও দেখা দিয়েছে, যেখানে একজন শিক্ষককে একাধিক শ্রেণির পাঠদানের ভার বহন করতে হয়।

এ নিয়ে স্থানীয় অভিভাবকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শুধু শিক্ষক নিয়োগ নয়, শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

সানজানা

×