
ছবি: জনকন্ঠ
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও তার সঙ্গে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটি এখন জনসাধারণের কোনো উপকারেই আসছে না। ফলে ওই এলাকার হাজারো মানুষ প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীন গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ। সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চররৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরা গ্রামসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন হলেও দুই পাশে এখনো কোনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। ফলে ব্রিজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই ব্রিজটি ব্যবহার করতে না পারায় বাধ্য হয়ে মানুষজন আগের মতোই ফসলের জমির আইল এবং কাদাযুক্ত পথ ধরে চলাচল করছেন।
বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও রোগীদের জন্য এই যাতায়াত পথ হয়ে উঠেছে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসাতেও দেখা দিয়েছে বড় ধরনের সমস্যা। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য হাটে নিতে পারছেন না ঠিকমতো, আবার জরুরি প্রয়োজনে সময়মতো চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিজ নির্মাণের খবরে তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। ভেবেছিলেন, অবশেষে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে। কিন্তু নির্মাণ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় সেই আশায় এখন হতাশা নেমে এসেছে।
চররৌহা গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, "আমরা প্রথমে খুব খুশি হয়েছিলাম ব্রিজটি নির্মাণের খবর পেয়ে। কিন্তু এখন দেখছি, শুধু ব্রিজ বানিয়ে রেখে গেছে। দুই পাশে রাস্তা না থাকায় মানুষজন আগের মতোই কাদা পথে হাঁটছে। এটি কোনো উন্নয়ন নয়, বরং টাকার অপচয়। আমরা দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।"
এ বিষয়ে স্থানীয় সাতপোয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাসানুর কবীর স্বপন বলেন, “ব্রিজ নির্মাণের পরপরই আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছি। আশা করছি, দ্রুতই কাজ শুরু হবে।”
ব্রিজের নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী বেলাল হোসেন বলেন, “আমরা শুধু ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিলাম, সেটি সম্পন্ন হয়েছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। আমরা বিষয়টি তাদের অবগত করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, “ব্রিজটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন এলাকাবাসীর দুর্ভোগ দূর করতে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাজেট ও অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, ব্রিজটি নির্মাণে সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও এর সঠিক পরিকল্পনা ও তদারকি না থাকায় সেটি এখন অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হলে এই প্রকল্প জনগণের জন্য নয়, বরং কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
Mily