
ছবি: সংগৃহীত।
কফির স্বাদ, অভ্যাস বা শক্তি ফেরানোর গুণেই হোক, এটি যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বে প্রতিদিনের একটি অপরিহার্য পানীয় হয়ে উঠেছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই পানীয় মনোযোগ বাড়াতে, মেজাজ ভালো রাখতে ও জাগরণে সাহায্য করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষ হরমোন স্বাস্থ্য, ঘুম এবং মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ায়, কফি শরীরে কীভাবে প্রভাব ফেলে—তা নিয়েও গবেষণা বাড়ছে।
ফাংশনাল মেডিকেল প্র্যাকটিশনার ডা. অ্যান্ড্রু গ্রিনল্যান্ড বলেন, কার শরীর কফিতে কেমন প্রতিক্রিয়া জানায়, তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় এবং তা নির্ভর করে মানসিক চাপ, ঘুমের মান এবং এমনকি লিঙ্গের ওপরও।
তিনি জানান, “ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে, অর্থাৎ প্রথম ১–২ ঘণ্টার মধ্যে কফি পান করলে শরীরের প্রাকৃতিক কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) রিদম ব্যাহত হতে পারে। এতে সারাদিনে ক্লান্তি বেড়ে যেতে পারে কিংবা রাতে অতিরিক্ত উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।”
তাই কফি পানের আদর্শ সময় সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে, যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য কার্যকর। ঘুম থেকে জেগে অন্তত ৯০ থেকে ১২০ মিনিট পর কফি খেলে শরীরের শক্তির স্তর স্থির থাকে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
ডা. গ্রিনল্যান্ড আরও জানান, “অনেক রোগীর উচ্চ কর্টিসলের জন্য দায়ী ছিল অতিরিক্ত কফি পান। তারা যখন মাত্র এক কাপ কফিতে নেমে আসে, তখন তাদের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে যায় এবং ঘুমের মানও ভালো হয়।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “খালি পেটে কফি পান করলে শরীরের স্ট্রেস সিস্টেম আরও বেশি উত্তেজিত হয়, যা মানসিক চাপে থাকা বা হরমোনে অস্থিরতায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য আরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সকালের কফির আগে কিছু খাওয়া উচিত।”
নারীদের জন্যও রয়েছে বিশেষ পরামর্শ। মাসিক চক্রের দ্বিতীয় ভাগে (লুটিয়াল ফেজ) কফি পান পিএমএস লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ এই সময়ে শরীরের কর্টিসল বেড়ে যায়, অথচ দরকার হয় প্রশান্তিদায়ক হরমোন প্রোজেস্টেরনের। তাই এই সময়ে কফি পরিহার করাই ভালো।
তিনি বলেন, “কফি নিজে সমস্যার মূল কারণ নয়, বরং এটি শরীর, হরমোন, ঘুম-চক্র ও মানসিক চাপের সঙ্গে কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, সেটাই মুখ্য। কারও শরীর কফি ভালোভাবে নিতে পারে, আবার কেউ বুঝতেই পারে না যে কফিই দীর্ঘমেয়াদে শরীর খারাপের একটি গোপন কারণ।”
শেষে ডা. গ্রিনল্যান্ড বলেন, “সবকিছু নির্ভর করে ব্যক্তির শরীর ও পরিস্থিতির উপর। তাই কফি শরীরের জন্য উপকারী হবে নাকি ক্ষতিকর, তা বুঝে তবেই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।”
সূত্র: https://short-link.me/12zFr
মিরাজ খান