ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে বাবা-মায়ের করণীয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৭ জুলাই ২০২৫

শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে বাবা-মায়ের করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের অনেকেই স্বাভাবিকভাবেই সংযত ও চুপচাপ স্বভাবের হয়। এটি কোনো সমস্যা নয়, এটি একটি স্বভাব। তাই যারা নিজের সন্তানের শান্ত ব্যবহারে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন, তাদের উচিত হলো বুঝে ওঠা যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা যায় ধীরে ধীরে।

সামাজিক পরিস্থিতিতে বাবা-মায়েরা অনেক সময় বলেন, “ও একটু লাজুক।” কিন্তু এই বাক্যটি শিশুর মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। বারবার এমন শুনতে শুনতে শিশুরা মনে করতে শুরু করে, “আমি চুপচাপই থাকবো, কারণ আমি শাই।”

এর পরিবর্তে বলুন, “ও নতুন মানুষদের একটু চিনে নিতে পছন্দ করে।” কিংবা, “ও একটু সময় নেয় নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে।” এতে করে শিশুর আত্মবিশ্বাস কমে না, বরং তার বৃদ্ধি পায়।

আত্মবিশ্বাস জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এটি তৈরি হয় ছোট ছোট সাহসী পদক্ষেপে। যেমন:

  • রেস্টুরেন্টে নিজে নিজের খাবার অর্ডার দেওয়া
  • দোকানে “ধন্যবাদ” বলা
  • পরিচিত প্রতিবেশীকে নমস্কার জানানো
  • এই ছোট ছোট কাজই ভবিষ্যতের বড় সাহস গড়ে তোলে।

সব শিশু কথার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে না। কেউ গান গেয়ে, কেউ ছবি এঁকে, আবার কেউ লিখে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। তাই খেয়াল করুন, আপনার সন্তান কোন মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

রান্নাঘরের টেবিলে চুপচাপ বসে ছবি আঁকা কিংবা খাতায় গল্প লেখাও নিজের ভেতরের কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়ার অংশ।

শিশু যদি জনসমক্ষে কথা বলতে ভয় পায়, তাহলে তা অনুশীলন করুন বাড়িতে। বাবা-মা মিলে ‘রোল-প্লে’ খেলতে পারেন—কখনও মা হবেন শিক্ষক, কখনও বাবা হবেন নতুন বন্ধু। শিশু এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে এবং পরিস্থিতির ভয় কেটে যাবে।

অনেক সময় আত্মীয়ের কোনো শিশু সবার সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে, অথচ নিজের সন্তান একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এই তুলনা করা ক্ষতিকর। বরং বলুন, “তুমি আজ নিজে থেকে হ্যালো বলেছো, এটা খুব বড় ব্যাপার।” নিজের অগ্রগতিকে গুরুত্ব দিন, বাইরের তুলনাকে নয়।

যখন কেউ আপনার সন্তানকে প্রশ্ন করে এবং সে একটু চুপ করে থাকে, তখন তাড়াহুড়া করে আপনি উত্তর দেবেন না। সময় দিন। যদি না পারে, জিজ্ঞেস করুন, “তুমি কি আমার কানে বলে দেবে? আমি বলবো।”
এই ধীরে ধীরে এগোনোই শিশুর নিজের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে।

সব শিশু মঞ্চে উঠতে চায় না। কেউ হয়তো বৃত্তের এক পাশে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। সেটিও ঠিক আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশু যেন তার নিজের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিতে শেখে, যে গলাতেই সেটা প্রকাশ পাক না কেন।

আত্মবিশ্বাস মানে নিজেকে বদলে ফেলা নয়, বরং এমন পরিবেশ তৈরি করা, যাতে শিশু নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে পারে।

মুমু ২

×