
ছবি: সংগৃহীত।
ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে এমন ছয়টি খাবারের কথা জানালেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মারিয়া আবিহান্না। তার মতে, এই খাবারগুলো হজমের গতি ধীর করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে—যা ঠিক ওজন কমানোর ইনজেকশনের মতোই কাজ করে, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
গত কয়েক বছর ধরেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন হ্রাসে কার্যকর ‘জিএলপি-১ ইনহিবিটার’ ধরনের ওষুধ নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। যুক্তরাজ্যে ওজন কমাতে ব্যবহৃত ইনজেকশনজাত ওষুধ ওয়েগোভি (Semaglutide) ও মাউঞ্জারো (Tirzepatide) কিছু নির্দিষ্ট রোগীদের জন্য এনএইচএস অনুমোদিত করেছে।
তবে এসব ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা বজায় রাখার পরামর্শই দেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যেই খাবারের মাধ্যমেও এমন প্রভাব পেতে পারেন বলে জানালেন Food Label Maker-এর পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মারিয়া আবিহান্না।
তিনি বলেন, “জিএলপি-১ ইনহিবিটর ওষুধগুলো হজম ধীর করে এবং পেট ভরার সংকেত দেয় এমন হরমোন উদ্দীপিত করে। কিছু নির্দিষ্ট খাবারও একই কাজ করতে পারে—একেবারে প্রাকৃতিকভাবে, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।”
এই খাবারগুলো হলো:
১. প্রোটিন।
সবচেয়ে আগে আসে প্রোটিন। ডিম, গ্রিক দই ও এডামামে (সয়াবিনের একধরনের রূপ) তালিকার শীর্ষে।
মারিয়া বলেন, “প্রোটিন এমন একটি উপাদান যা ক্ষুধা দমনকারী হরমোন যেমন PYY এবং GLP-1 কে সক্রিয় করে। যেমন দুটি ডিম (১৩ গ্রাম প্রোটিন) বা এক কাপ গ্রিক দই (প্রায় ১০ গ্রাম প্রোটিন) দিনের শুরুতেই ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে।”
২. ফাইবার বা আঁশ।
চিয়া বীজ, ডাল ও ওটস হজম ধীর করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
চিয়া বীজে প্রতি টেবিলচামচে থাকে ৫ গ্রাম ফাইবার, যা পেটে ফুলে হজম বিলম্বিত করে। ওটস ও ডালে থাকা সলিউবল ফাইবার ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৩. স্বাস্থ্যকর চর্বি।
মারিয়া বলেন, “সঠিক ধরনের চর্বি খেলে তা ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে।”
অ্যাভোকাডো ও পিনাট বাটারে থাকে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ফাইবার—যা একসাথে খেলে পেট ভরার অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৪. বুদ্ধিদীপ্ত কার্বোহাইড্রেট।
কুইনোয়া, মিষ্টি আলু ও ডাল ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার হঠাৎ ওঠানামা কমায়।
৫. কম-ক্যালরির বেশি পরিমাণে খাওয়া যায় এমন সবজি।
লেটুস, ব্রোকলি, শসা জাতীয় সবজি পেট ভরাতে সাহায্য করে, কিন্তু ক্যালোরি বাড়ায় না।
“এই সবজি পাকস্থলিকে পূর্ণ রাখে এবং মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে, আমরা পেটপুরে খেয়েছি,” বলেন মারিয়া।
৬. স্মার্ট স্ন্যাকস।
মধ্যাহ্নভোজ বা রাতের খাবারের মাঝখানে ক্ষুধা লাগলে এমন স্ন্যাকস বেছে নিতে হবে যা ক্ষুধা কমাবে এবং পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করবে।
গ্রিন টি ও ম্যাচা হালকা ক্ষুধানাশক হিসেবে কাজ করে।
এডামামে বা আপেলের সঙ্গে বাদাম বাটার—এমন ফাইবার ও ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মারিয়া বলেন, “জিএলপি-১ ওষুধ কম খাবারে পেট ভরার অনুভূতি দেয়। তবে আপনি চাইলে খাবার দিয়েই একই প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে পারেন।”
তবে ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত বলেও জানান তিনি।
মিরাজ খান