
ছবি: সংগৃহীত।
প্রতিদিনের আটটি সাধারণ অভ্যাস ঠিকভাবে না মানলে হৃদ্স্পন্দনের অস্বাভাবিকতা বা অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (AF) হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই রোগটি স্ট্রোকের প্রায় ২০ শতাংশের জন্য দায়ী।
সম্প্রতি আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন নির্ধারিত ‘লাইফস এসেনশিয়াল ৮’ (LE8) স্কোরে যারা উচ্চ নম্বর পান, তাদের অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন ও নানা কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। অন্যদিকে, যারা এই অভ্যাসগুলো মেনে চলেন না, তাদের মধ্যে এই বিপজ্জনক হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণের কাছাকাছি।
অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হলো সবচেয়ে সাধারণ অ্যারিদমিয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, যেখানে হৃদয়ের উপরের ও নিচের অংশ একসাথে কাজ করে না। যুক্তরাজ্যে প্রতি পাঁচটি স্ট্রোকের একটির পেছনে রয়েছে এই রোগ। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, এটি প্রায়ই নীরবভাবে ঘটে, কোনো উপসর্গ ছাড়াই, ফলে স্ট্রোক না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তারা এই রোগে আক্রান্ত।
গবেষকরা ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৩,১৬১ জনের ওপর ১০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ চালান। এই সময়ে ৪২৪ জনের মৃত্যু হয় এবং ৪১০ জন অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনে আক্রান্ত হন। দেখা যায়, LE8 স্কোরে যারা কম নম্বর পেয়েছেন, তাদের মধ্যে রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে যাদের মাঝারি স্কোর ছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।
গবেষণায় প্রতিটি অভ্যাস আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওজন, রক্তচাপ এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের ঝুঁকির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রভাবক। অন্যদিকে ঘুম, ধূমপান, কোলেস্টেরল বা শারীরিক ব্যায়ামের প্রভাব তুলনামূলক কম।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, LE8 স্কোরে উচ্চ নম্বর পেতে একজন প্রাপ্তবয়স্ককে নিচের অভ্যাসগুলো অনুসরণ করতে হবে—
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস: ফলমূল, শাকসবজি, সম্পূর্ণ শস্য, প্রোটিন, বাদাম, বীজ এবং ট্রপিকাল নয় এমন তেলের সুষম গ্রহণ।
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতি সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা মাঝারি মাত্রার বা ৭৫ মিনিট তীব্র ব্যায়াম।
ধূমপান পরিহার: ধূমপান একেবারে না করা।
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিরাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম।
স্বাস্থ্যকর ওজন: ওজন এমন রাখা যাতে BMI স্বাস্থ্যকর সীমায় থাকে।
উপযুক্ত রক্তচাপ: রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg এর নিচে রাখা।
কম কোলেস্টেরল: রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৫ mmol/L এর নিচে রাখা।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
গবেষকরা আশা প্রকাশ করেছেন, এই গবেষণার ফলে চিকিৎসকেরা হৃদ্রোগ প্রতিরোধে LE8 ভিত্তিক পরামর্শ দিতে উৎসাহ পাবেন এবং ভবিষ্যতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
মিরাজ খান