
ছবি: জনকণ্ঠ
নিরাপদ ও টেকসই কৃষির মাধ্যমে কৃষকের ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয় আধুনিক কৃষি উদ্ভাবন, বাজার প্রবেশাধিকার, ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও জলবায়ু সহনশীলতার পক্ষে বক্তাদের আহ্বান।
রবিবার (৬ জুলাই) সকাল ১০টায় গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ‘যুব কৃষক ক্যাম্প ও অ্যাগ্রিলিম্পিকস (ওয়াইএফসিএ) বাংলাদেশ ২০২৫’।
চার দিনব্যাপী এই যুব সম্মেলনের আয়োজক কোস্ট ফাউন্ডেশন, সহযোগিতায় আছে এশিয়ান ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন ফর সাসটেইনেবল রুরাল ডেভেলপমেন্ট (এএফএ) এবং অর্থায়নে ইফাদ বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দেশের ২৫টিরও বেশি জেলা থেকে আগত ১৫০ জনের অধিক যুব কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা এতে অংশগ্রহণ করছেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে এএফএ-এর মহাসচিব মা. এস্ট্রেলা "এস্টার" পেনুনিয়া বলেন, যুবসমাজ ভবিষ্যতের জন্য সৃষ্টিকর্তার উপহার। এই আয়োজন তাদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা নেতৃত্ব দিতে, উদ্ভাবন করতে ও সমাধান নির্মাণে, বিশেষ করে জলবায়ু সংকটের সমাধানে এগিয়ে আসতে পারবে।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এখন নিরাপদ কৃষি পণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি সমবায়গুলোর হাতে বিপণন ও মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
এএফএ-এর অপারেশনস ম্যানেজার- ইস্ট, সেন্ট্রাল অ্যান্ড সাউথ এশিয়া, মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, যুবরাই এএফএ-এর কেন্দ্রবিন্দু। আমরা ১৬টি দেশে কাজ করি এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আরও ২৭টি দেশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, যাতে তরুণরা কৃষিকে পেশা হিসেবে গ্রহণে উৎসাহিত হয় এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক নীতিমালায় প্রভাব রাখতে পারে।
গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ড. মো. সাইফুল আলম বলেন, প্রথাগত কৃষির যুগ এখন শেষ। আধুনিক, টেকসই ও বাণিজ্যিক কৃষির দিকে যেতে হলে যুবদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহসিন আলী বলেন, ভবিষ্যতের কৃষি নির্ভর করবে যুবদের কণ্ঠ, দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্বের উপর, শুধু প্রযুক্তির উপর নয়।
হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত আর্থিক লেনদেন করলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আস্থা তৈরি হয়, যা কৃষকদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করে। একইসঙ্গে যুবদের চাকরি খোঁজার মানসিকতা থেকে বের হয়ে উদ্যোক্তা হতে হবে। কৃষকদের অধিকার রক্ষায় এএফএ-এর মতো প্ল্যাটফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পদক্ষেপ-এর টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর মো. সাজ্জাদ হোসেন এই আয়োজনকে আগামী কৃষির জন্য একটি দিক নির্দেশনা হিসেবে অভিহিত করেন। এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক এ.বি.এম. শামসুল হুদা বলেন, মহামারিকালে কৃষকরাই দেশের প্রাণরক্ষা করেছেন। এখন সময় এসেছে তাদের অবদান যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার, বিশেষ করে নারীদের, যারা কৃষি শ্রমশক্তির ৫৬%।
সার্ক কৃষি কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. হারুনুর রশিদ বলেন, প্রযুক্তিই কৃষির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে ড্রোন প্রযুক্তি, সবই যুব উদ্ভাবকদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে। যুবদের উদ্বেগ যেমন জৈব সারের উচ্চমূল্য, পুঁজি ও সুযোগের অভাব, সেগুলোর সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নীতিগত সংস্কার ও সমবায় মডেল গঠন জরুরি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালক মো. সাইফুল আজম খান তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত বন্যা, খরা ও নদীভাঙনের কারণে কৃষি আজ হুমকির মুখে। এই সংকট মোকাবিলায় যুবরাই কৃষির ভরসা ও ভবিষ্যৎ। তিনি আরও বলেন, এই আয়োজন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, যেখানে যুব নেতৃত্ব পাশাপাশি একটি টেকসই ও ন্যায্য খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনৎ কুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, কৃষি জাতির মেরুদণ্ড, একে আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।
কাওসার/শহীদ