
শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বেশ অগ্রগতি হয়েছে
পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। সরকার আশা করছে, আলোচনার মাধ্যমে শুল্কছাড় পাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পাল্টা শুল্কের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী বৈঠক হতে পারে ৯ জুলাই।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। কোনো কোনো দেশের সঙ্গে যুক্তির কাছাকাছি চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তির আলোচনায় নতুন জটিলতাও তৈরি হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে ৩ জুলাই একটা বৈঠক করেছি। আমরা এখনো আশা করছি, ভালো একটা শুল্কছাড় পাব। আমাদের দিক থেকে কাঠামোগত ও শুল্কগতভাবে যত কিছু ছাড় দেওয়া সম্ভব, অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় তার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছি। শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ৯ জুলাই আরেকটি বৈঠক আছে। ভালো ফল পাব আশা করছি। ৩ জুলাইয়ের বৈঠকে ইউএসটিআর আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগীদের চেয়ে পিছিয়ে থাকব না। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা অর্থাৎ বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এতে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ।
শুল্ক আরোপের কার্যকরের তারিখ ছিল গত ৯ এপ্রিল। তবে ওইদিনই যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্কহারের ঘোষণাও তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হবে ৯ জুলাই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার গুরুত্বপূর্ণ। ফলে তারা জোর আলোচনা চালাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ছাড়ও দিচ্ছে, যাতে চুক্তি হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গত মাসেই বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেয়। ৮ মে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে একে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
এর আগে গত ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য চুক্তিতে সই করেছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই চুক্তি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এদিকে গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। তিনি বলেন, এখন থেকে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প ঘোষিত পাল্টা শুল্কনীতির আওতায় এসব পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, যদি অন্য কোনো দেশ তাদের পণ্য ভিয়েতনামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, তাহলে সেসব পণ্যে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। তবে নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে না।
তবে চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে কি না বা ভিয়েতনাম এই শর্তে রাজি হয়েছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনা আছে বলে এর আগে জানিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা শুরু হয়েছে।
সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, তুলা ও গম কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে। ইউএসটিআরের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের আলোচনার বিষয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, আলোচনা ইতিবাচকভাবেই এগোচ্ছে। চুক্তি এখনই করা সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ স্থগিত থাকার মেয়াদ বাড়তে পারে।
প্যানেল হু