ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব

রাকিবুল ইসলাম সৈকত

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:০০, ৬ জুলাই ২০২৫

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব

“রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে।”
জুলাই মানেই বিপ্লব। জুলাই মানেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ জনতার গর্জে ওঠা! জুলাই মানে কোনো বাধা নয়, জুলাই শুধু স্বাধীনতার বার্তা নিয়ে আসে!

যখন শাসক নিজেই শোষকে পরিণত হয়, তখনই সমাজে নামে ভয়াবহ বিপর্যয়। তেমনই এক বিপর্যয় নেমে এসেছিল ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছিল। যেভাবে এক সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, তেমনি স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাও ছাত্রদের উপর চালিয়েছিলেন একই নিষ্ঠুরতা। জুলাইয়ের রাত যত গভীর হতে লাগল, ততই ছাত্র-জনতার আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠল। শহরজুড়ে দেখা যেতে লাগল লাশের সারি দীর্ঘ হতে থাকল শহীদদের মিছিল। এই আত্মত্যাগে মনে পড়ে যায় ফররুখ আহমেদের পঙ্‌ক্তি-
“রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?”

অবশেষে শিক্ষক, ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় ৫ই আগস্ট শুরু হয় এক অভূতপূর্ব বিপ্লব।

বিপ্লবের সূচনা ঘটে যখন স্বৈরশাসক হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনের আড়ালে তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য ভর্তি ও চাকরির কোটার পরিমাণ বাড়িয়ে বৈষম্য তৈরি করেন। ছাত্রসমাজ এই বৈষম্য মেনে নিতে পারেনি। শুরু হয় গণজাগরণ।

প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনের সূচনা; এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে—কলেজ, স্কুল, জেলা, উপজেলা পর্যন্ত।আন্দোলন যখন ক্রমেই উত্তাল হয়ে ওঠে, তখন সরকার নিজেদের রক্ষার জন্য ছাত্রদের উপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়।

১১ই জুলাই, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর প্রথম পুলিশ হামলা চালানো হয়। অনেক মেধাবী ছাত্র আহত ও নিহত হয়। এরপর আন্দোলন দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

১৬ই জুলাই, ছাত্রনেতা আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। সেই মুহূর্তে আন্দোলনের বাঁধ ভেঙে যায়। ছাত্রদের সাথে আমজনতাও রাজপথে নামে। শুরু হয় বিভীষিকাময় এক অধ্যায়। পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে শত শত ছাত্রকে হত্যা করে। ইন্টারনেট বন্ধ করে সবাইকে অন্ধকারে রেখে সরকার শত শত মায়ের বুক খালি করে।
 

এই অবস্থায় মনে পড়ে যায় বঙ্গবন্ধুর সেই কথাটি— “মানুষের যখন পতন আসে, তখন পদে পদে ভুল করতে শুরু করে।” সত্যিই তাই ঘটেছিল। ভাইয়ের আত্মত্যাগ, বোনের অপেক্ষা, মায়ের কান্নায় ভারী হয়ে যায় বাংলার আকাশ-বাতাস। রাস্তায় পড়ে থাকে বিভৎস লাশ, লাশের মিছিল যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। জেলখানা ভরে যায় মেধাবী ছাত্রদের দ্বারা। ৫ই আগস্ট—যখন কেউ আর মৃত্যুকে ভয় পায় না, বুলেটের মুখে দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে যায় তখনই স্বৈরাচার বাংলা ছাড়তে বাধ্য হয়। ঠিক তখনই শত বাধা-বিপত্তি ছিন্ন করে, পূর্ব আকাশে উদিত হয় রক্তিম এক সূর্য-স্বাধীনতার সূর্য।

অবশেষে অর্জিত হয় বহু কাঙ্ক্ষিত সেই স্বাধীনতা!

 

 

লেখক:
রাকিবুল ইসলাম সৈকত
বিভাগ: ইংরেজি, ১৮তম ব্যাচ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

আফরোজা

×